ভেতরে ভেতরে এদের চলে আসল লেনদেনের বেওসা। যে বেওসায় বেনোজলের মতন টাকা আসে এদের হাতে। শাদিশুদা বৌ বেচাকেনার বেওসা। গ্রামের যত অপাহীজ, ল্যাংড়া, নাকাম মর্দ আছে, অনেক সময় বেহার জন্য লড়কি পায় না। তারা কি শুখা রোটি তোড়বে? আনাও সরেস মাল জমনার ওপার থেকে — পারোদের। বঙ্গাল, আসাম, ওড়িশা, বিহার থেকে, পারো, মোলকী, মালজাদীগুলো। বেহা রচাবার নাম করে এনে জুতে দাও খেতিতে, আর ঘরের ঝি-গিরিতে। বাড়তি নিজে মজা লোটো, ইয়ার দোস্ত বুলাও। গা শিরশিরিয়ে ওঠে গৌরীর।
পড়তে থাকুনধর্মাবতার, আমার পোড়া ঝলসানো অর্ধেক মুখ দেখিয়ে আপনাকে চমকে দিয়েছি বলে ক্ষমা করবেন। দোষীকে দশ বছরের শাস্তি দিলেন। তাতে আমার কি? আমি সর্বোদয়া বিদ্যালয়ের ছাত্রী ছিলাম। বড্ড ইচ্ছে ছিল গান শেখার, অল ইণ্ডিয়া কম্পিটিশানে গান গাইবার। থাক, আপদ গেছে। মুখই নেই তো গাইব কি! দুটো ডাল রুটি ছিঁড়ে মুখে তুলতে কষ্টে জান বেরিয়ে যায়, তার আবার লেখাপড়া, গান করা!
পড়তে থাকুনটুকলি তো গেলোই, সাথে গেলো মান ইজ্জত। বাইরের নকল বাবুয়ানির বেনোজলের স্রোতে পাক খেয়ে ঘুরে ঘুরে চলে গেলো ঘরের শোভনীয়তা, লক্ষ্মীশ্রী, আব্রু। এ তো শুধু কলুটোলার কাহিনী নয়, এ আপামর বাবু সমাজের পরিণতি। কোলকেতা শহরে তখন নতুন করে বান ডাকছে সমাজে সংস্কৃতিতে। বাবু সম্প্রদায়ের বনেদীয়ানা তখন আর প্রায় নেই বললেই চলে। নেই সারাদিন বসে লক্কা পায়রা ওড়ানো আর দশ টাকার নোটে পাকিয়ে বিড়ি ফোঁকার অকর্মণ্যতা।
পড়তে থাকুনদলের বিরিঞ্চি যেন কোতোয়ালের পেয়াদা। কারো কারো বাড়ির উনুনে পা দিয়ে সে চাঁদা আদায় করে ছেড়েচে। কত কত বড়মানুষকে তুষ্ট করতে মোসাএবির চূড়ান্ত করেচে। এই তো, যেমন পাড়ার দত্তবাবু! কম মাল না কি! কিছুতেই ধরা যায় না চাঁদা আদায়ের জন্যে। বিরিঞ্চিও থাকে তক্কে তক্কে। শেষে কাক ভোরবেলায় দাঁতনরত দত্তকে গিয়ে এক্কেরে জাপটে ধরলে বিরিঞ্চি। পাড়া কাঁপিয়ে “ধরেছি, ধরেছি” বলে বিকট চীৎকার জুড়লে।
পড়তে থাকুনএকটানা কোষারব চলতেই থাকলো। হঠাৎ টুলোর কী হয়ে গেলো সে ছুটে এসে ঘোষালের কুতকুতে চোখে মারলে মোক্ষম এক ঘুঁষি। “বাপ্” বলে ঘোষাল পড়লেন দঁ বাবুর ঘাড়ে। দঁ-এর ভারি লাঠি গিয়ে ঠনাৎ হলো বল্লালের বাঁশে। বাঁশ ঘুরে ফটাস হলো কলুটোলার বাবুর টাকে। আচমকা আঘাতে ক্ষেপে গিয়ে বাবু এক চড় কষালেন কাছেই দাঁড়িয়ে থাকা মোসাএব কানাই দত্তকে। যে কানাই কি না কখুনো বাবুর এ পজ্জন্ত বিরুদ্ধ করে নাই। সেই কানাই বিনা দোষে মার খেয়ে ভ্যাঁক করে দিলে কেঁদে।
পড়তে থাকুনমোতির বিবাহ বাসরে লাখ খানেক লোক নেমন্তন্নে এসেছিলো। কি সে বাহার! কলুটোলার আশেপাশে চৌহদ্দিতে এমন বেড়াল-বে বাপের জন্মে লোকে দেখেনি কো! উপস্থিত আছেন দশটা মান্যগন্য বাবু!
পড়তে থাকুনমহালয়ার পুণ্য তিথিতে প্রতিলিপি দ্বারা আয়োজিত নারীশক্তি বিষয়ক প্রতিযোগীতা ‘উজান — নতুন বোধন’ পর্বে আমার একটি লেখা প্রকাশিত হল, ‘ফুলের নাম অপরাজিতা’। মা দুর্গার ঐশী শক্তি আছে প্রতিটি মেয়ের মনের অনুবিন্দুতে। তাই তো সমাজের কঠোর নিপীড়নেও তারা হারিয়ে যায় না, মুছে যায় না। তাদের তিত্লি-জীবনের ভাঙা ডানা নিয়েও তারা ওড়ে। নতুন আশার ফুলে ফুলে জীবনের ডালে পাতায় । তাই এই সময় আপনাদের সাথে মায়ের শক্তিরূপেণ সংস্থিতা রূপের এক কাহিনী শেয়ার করাটা বোধহয় অপ্রাসঙ্গিক হবে না।
পড়তে থাকুনবাঁদরের গলায় মুক্তামালা হয়ে ঝুলচে টুকলি, ভাবতেই বুক কনকন করে দঁ-এর। রাগে গা জ্বলে যায়। ছ্যা ছ্যা ছ্যা। কলুটোলার বাবু! বলি, বাবুত্বের কি আচে ঐ চামচিকেটার? কেমন করে টুকলিকে হস্তগত করা যায় ভেবে ভেবে বাবু রূপোর পিকদান পান চুমরে চুমরে ফেলে ভরিয়ে দিলেন।
পড়তে থাকুনযজমানের বাড়ি গমগমে। পূজোর দিন ঘনিয়ে আসছে। বিদেশ বিভুঁই থেকে আত্মীয় স্বজন এলো বলে ছানাপোনা সুদ্ধু করি। এরই মাঝে নিত্যি নিত্যি অশান্তি। চুরি ছেনতাই বাড়ছে। আজ ওই মাগীর নাকের নথ টেনে পালালো তো কাল কোন বাবুর বাড়ির “মারি তো গণ্ডার লুটি তো ভাণ্ডার” করলো। টহলদারগুলো সব এক একটা হয়েছে অকম্মার ধাড়ি।
পড়তে থাকুনচারি দিকে প্রচুর ভিড় জমেছে। পথচলতি মানুষের আর পাড়া বেপাড়ার দল মিলে। ত্রিদিববাবু তারই মধ্যে থেকে চোখ দিয়ে খুঁজে নিলেন সুরঙ্গঁমাকে। ‘এসো মা, সময় হয়েছে,’ বলে ডাকলেন। চোখ ফেড়ে মাতব্বর দেখে বরাবর চোখ নীচু করে হেঁটে যাওয়া মেয়েটা গট্গট্ করে এগিয়ে আসছে তার দিকে। ‘এতো ভিড়ের মধে্য মেয়েছেলেটার হাতে মার খেলে সব পেস্টিজ্ পাংচার’ ভেবে মাতব্বরের জিভ শুকিয়ে এলো।
পড়তে থাকুন