সরস্বতীর শাড়ি

“একবার গঙ্গা আর নারায়ণ পরস্পরের দিকে চোখ তাকাতাকি করে হাসলে নারায়ণের তিন বৌ গঙ্গা, লক্ষ্মী আর সরস্বতীর মধ‍্যে চুলোচুলি ঝগড়া শুরু হল। উরিব্বাস! সে কি যুদ্ধু রে! দেব-দেবীর চুলোচুলি মানে বুঝতেই পারছিস। ওনাদের তু-তু ম‍্যায়-ম‍্যায়টা আগডুম বাগডুম দিয়ে শুরু হলেও শেষের প‍্যাঁচে একটা অভিশাপ-টভিশাপ থাকবেই। এখানেও হল। গঙ্গার অভিশাপে সরস্বতীকে হতে হল নদী! তাঁকে মর্ত‍্যে নেমে যেতে হল। আচ্ছা খাসা গুণবতী রূপবতী বিদ‍্যেধরী মহিলা সলিলা হয়ে রয়ে গেলেন। কি গেরো!” — এক নিশ্বাসে গল্প শেষ করে পাঁচ নাম্বার চায়ের কাপটা সন্তুর টেবিলে নামিয়ে রাখল ওর মামা।

“কী আবোল তাবোল ভজাচ্ছিস বল তো তখন থেকে?” বিরক্ত মুখে ঘরে সেঁধিয়ে এল সন্তুর মা। “কাল সরস্বতী পুজো। এমনিতেই পড়াশোনা লাটে উঠবে। ক্লাবের সেক্রেটারি ভাণ্টুটাকে ভজিয়ে কোনমতে ‘একদিন পাখি উড়ে যাবে যে আকাশে’ বন্ধ রেখেছি।  ভাণ্টু কাঁচুমাচু হয়ে বলেছিল, বৌদি, পুজোটা নিয়ে ‘আমারও তো সাধ ছিল, আশা ছিল মনে’। তার মানে কাল সক্কাল থেকেই হাঁকডাক, লম্ফঝম্ফ গানাবাজনা। তার মধ‍্যে আজকের দিনটাও কি না তুই আলফাল বকে বরবাদ করছিস?” — রাগী চোখে ছেলের দিকে তাকিয়ে বলল মন্দিরা।

বেগতিক দেখে ঝোলাব‍্যাগ কাঁধে ফেলে উঠে দাঁড়াল মামা। দিদি খেপচুরিয়াস হলে আর রক্ষে নেই। আগামী ছ’ মাস রাগ পুষে রাখবে। এই দিদি ছাড়া তিন কুলে আর কেউ নেই মামার। ওর বাউণ্ডুলে জীবন। এক দোহার দলের গীতিকার হয়ে বাংলার গ্রাম গঞ্জে ঘুরে বেড়ায়। গ্রামের লোকের কথকতা নিয়ে গান বাঁধে। মাঝে মধ‍্যে এই সম্পর্কের মায়া টেনে আনে শহরের বুকে। আছে থাক, শুধু শুধু এই সম্পর্কের সুতোটায় টান মেরে কী লাভ?

তবে ভাগনা বেচারার এই ফাঁদে পড়া জীবনটা মাঝে মধ‍্যে বড্ড মোচড় দেয় বুকে। শালার সেই যে ‘অ-এ অজগর আসছে তেড়ে’ দিয়ে ল‍্যাখাপড়া শুরু হয়, পড়ুয়াদের কোঁৎ করে গিলে বাকি কুড়িটা বছর এক্কেরে ছিবড়ে করে ছাড়ে। ও-এর ঔষধ আর কোন কাজেই লাগে না। লঝঝড়ে মার্কা হয়ে দু-চার পাত কলে ছাঁটা বিদ‍্যে বুদ্ধি নিয়ে যে যার মতন ঢুকে যায় কাজকর্মের কারখানায়। — এই সব ভাবতে ভাবতে  ভাগনাকে আসন্ন ঝড়ের হাত থেকে বাঁচাতে মামা বলল, “চলি রে দিদি। আসলে সন্তুটার একটা জেনারেল নলেজের টেস্ট নিচ্ছিলাম!”

মন্দিরার মুখ ভারিই থাকে। মা’কে ঝটপট ইম্প্রেস করতে না পারলে কাল সরস্বতীপুজোর দিনটা মাঠে মারা যাবে, ভাবল সন্তু। যেমন ভাবা তেমন কাজ। বিজ্ঞের মতন গম্ভীর গলায় বলল, “মামা, জাস্ট আ মোমেণ্ট! সরস্বতীর মতন জ্ঞানীগুণী মহিলার নদী হয়ে যাওয়ার ইন্সিডেণ্টটা কিন্তু হেলাফেলার নয়। মাইণ্ড ইট, এক সময় আমাদের সভ‍্যতা কিন্তু নদী বেসড্ই ছিল। উদাহরণ হল, হরপ্পা সভ‍্যতার পরে দীর্ঘ একটা মরুভূমি পার হয়ে মানুষের যে দলটা পাঞ্জাবের নদীবহুল জায়গায় এসে পৌঁছল তারা নিজেদের বলত আর্য। নদীকে ঘিরেই তাদের সভ‍্যতা গড়ে উঠেছিল। নদী কী দেয়নি তাদের?”

উত্তেজনায় পড়ার চেয়ার ঠেলে উঠে ঘরময় পায়চারি শুরু করল সন্তু। আড়চোখে দেখল মা’র চোখদুটো প্রায় দশ টাকা সাইজের রাজভোগ হয়ে উঠেছে। লোহা গরম থাকতে থাকতে ঘা মারা ভাল, তাই আবার বিজ্ঞের চালে শুরু করল, “খাবার পানীয় জল তো বটেই, দেহ মনের কম্ফর্টে মনের সুখে তারা শুরু করল জপতপ শাস্ত্র আলোচনা। এইভাবেই বৈদিক যুগের শুরু হল। লেখা হল এক সে বঢ কর এক বৈদিক ধর্মচিন্তার ফসল — ঋক-সাম-যজুঃ-অথর্ব বেদ।”

ওহ, এ ছেলে নিঃসন্দেহে আমারই ভাগনা বটে, উচ্ছ্বসিত মনে ভাবল মামা। হেঁকে বলল, “ব্রাভো! ব্রাভো মাই বয়!”

মা’কে চেকমেটের চালে চিত্তির করতে গুরুগম্ভীর হয়ে সন্তু বলল, “অ‍্যাকচুয়ালি আমার তো মনে হয় সরস্বতীই আদিমতম নদী। গঙ্গা-যমুনার চেয়েও ঢের পুরনো। সরস্বতীর সরস, মানে জল।”

মামা দেখল পুত্রের জ্ঞানের কলসের ঢক্কানিনাদে দিদি ঘেঁটে ঘ হয়ে বসে গেছে। ভাগনার সরস্বতীপুজোর দিনটাকেও সরস করার তাগিদে মামা দিদিকে শুনিয়ে শুনিয়ে ভাগনাকে বলল, “অন্নদায়িনী নদী হলেও সরস্বতী ঠাকরুণ বিদ‍্যেবতী তো বটেন! গোঁসাও আছে ষোল আনা। দেখিস কাল যেন আবার বইপত্তর খুলে বসে ওনাকে অপমান করিসনি! ভক্তিভরে অঞ্জলিটি দিয়ে বইপত্তর ভাল করে ঠাকরুণের পায়ে গুঁজে দিয়ে আসিস।” পায়ে চটি গলিয়ে উঠোনে নামল মামা।

পিছন পিছন চায়ের এঁটো কাপ প্লেট হাতে এল মন্দিরা। মন্দিরাকে বলব বলব করে কথাটা পেড়েই দিল সন্তুর মামা। “দিদি, সন্তুটার কেরিয়ারের পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় তোর নাক না গলালেও চলবে। ওর মগজাস্ত্র অতি তুখোড়। সব‍্যসাচীর মতন।”

ব‍্যাজার মুখে মন্দিরা বলল, “ওরে গুঁপে, শুধু মাথাভরা বুদ্ধি হলেই কি হল? সুস্থিরতা কোথায়? এঁটেল মাটির মতন কেতাবের সঙ্গে লেপটে থাকা কোথায়?”

মামা চোরা হেসে বলল, “তা বটে। স্কুল কলেজের অ‍্যাডমিশান কর্মকর্তা হোক অথবা বাপ-মা, সবারই কুমোরটুলিতে অর্ডার দেওয়া স্টুডেণ্ট চাই কি না!”

ভাইকে কাকুতি করে মন্দিরা বলে, “তুই এত জায়গায় ঘুরিস টুরিস, কোন সিদ্ধবাবার থান থেকে কিছু তাবিজ কবচ আনিস না একবার ভাইটি!” মামা ততক্ষণে গলিপথে। মুখ না ফিরিয়ে গলা তুলে বলল, “আজকাল কোন বাবার থানই সিদ্ধ নয়। সব স্টার ফ্রাএড্! তবু দেখবখ’ন।”

রান্নাঘরের দিকে যেতে গিয়ে মন্দিরা দেখল রিক্সা থেকে শাশুড়ি নামছেন। কাছেই শহরতলিতে ভাইয়ের বাড়ি। মাঝে মাঝেই থেকে আসেন গিয়ে। প‍্যাণ্ডেলটা বেঁধেছে গলির একেবারে মাঝখানে। ক্লাবের ছেলেদের হাঁকাহাঁকি তোড়জোড় তো আছেই। সাথে জুটেছে গলির যত মেয়ে-বৌ! এখন আগামী দু’ দিন সবার বাড়িতেই প্রায় হরিমটর। ক্লাব থেকে বাড়ি বাড়ি প্রসাদ বিতরণ হবে। সেই আনন্দে বারান্দায় রকে সব গুলতানিতে মেতেছে। বাচ্চাগুলো এক একটা ছাড়া গরু। উদয়াস্ত চরেই বেড়াচ্ছে প‍্যাণ্ডেলে। এই কি একটা মাধ‍্যমিক পরীক্ষার্থীর পড়াশোনার পরিবেশ?

দুম্ দুম্ করে গলির দিকের জালনাগুলো বন্ধ করে দিল মন্দিরা। সন্তু চিড়বিড়িয়ে ওঠে — “আরে, দম আটকে মারবে না কি? এক তো গুচ্ছের কাছুয়া ধূপ জ্বালিয়ে রেখেছ। তার উপর লিকুইড গুড নাইট, একটু পরে শুরু হবে তোমার ঠাকুরের সন্ধ‍্যের ধূপধুনোবাজি। আবার জালনাগুলোও বন্ধ করে দিলে?”

ছেলেকে বুঝিয়ে মন্দিরা বলল, “ছাত্রাণাং অধ‍্যয়নং তপঃ। তপস‍্যার মতন পড়াশোনা দরকার, বুঝলি? অত হুল্লোড়বাজির মধ‍্যে ধ‍্যানজ্ঞান হয় না। গোদের উপর বিষফোঁড়া হয়ে ঠাকুমাও ঢুকছে। এখন কোনরকম গল্প ফাঁদবি না!”

“দাদুভাইয়ের জন‍্য গরম গরম ফুলুরি তেলেভাজা আনলাম। দুটো মুড়ি ভেজে বাদাম দিয়ে আমাদের দিও তো!” বলেই শাশুড়ি কলঘরে গেলেন পা ধুতে। ব‍্যাজার হয়ে মন্দিরা বলল, “সামনে পরীক্ষা মা! রাস্তার জিনিষ এখন না খেলেই নয়? সু‍্যপ, স‍্যালাড, সেদ্ধ এসবই ওকে খাওয়াচ্ছি এখন।”

নেভাননী ঘুরে দাঁড়িয়ে ভুরু তুলে বললেন, “অ, পরীক্ষের হ’লে পেত্থমদিনেই যাতে চোখে সর্ষেফুল দেখে মুখ ভেটকে পড়ে তার গোটা ব‍্যবস্থাই পাকা করে রেখেছ দেখছি!”

“আমি অনলাইন রিসার্চ করে দেখেছি মা! কী কী খেলে পরীক্ষার্থীর স্নায়ু এ সময় স্থির থাকে। একটু একটু চীজ কুচি দিয়ে ক‍্যাপসিকাম, অলিভ, সাবুদানা, লেবু জল, ডাবের জল —”

“থামো!” হুঙ্কার দিলেন নেভাননী। “ও কি সাত রুগীর এক রুগী যে এই সব পথ‍্যি খাবে? আর এই ঠাণ্ডায় ডাবের জল, নেবুর জল? পেচ্ছাপ জমে বরফ হয়ে যাবে যে!”

“ও…ফ্…ফ্! ডিসগাস্টিং!” শুনে কানে আঙুল চাপা দেয় সন্তু। গজগজ করতে করতে নেভাননী পাপোষে ভেজা পা মোছেন। “আসল কাজ তো করলে না, এখন রুগীর পথ‍্য সেবন করলেই তোমার ছেলে বই বগলে সদাশিব হয়ে জ্ঞান কাননে বিহার করবে, কেমন?”

গোমড়া মুখে রান্নাঘরে মুড়ি ভাজতে থাকে মন্দিরা। শাশুড়ির ইঙ্গিত না বোঝার মতন কিছু নয়। ওনার গুরুদেব শিষ‍্যদের মন্ত্রপূত শ্বেতবস্ত্র দান করেন। সেই বস্ত্র সর্বদা ধারণ করে থাকলে বিপদ আপদ কেটে যায়।

শাশুড়ির ভাইঝি পুঁটির বিয়ে আর হয় না। এ পাত্তর, ও পাত্তর, এই দাবী, ওই দাবী! শেষে শাশুড়ির গুরুর দেওয়া মন্ত্রপূত কাপড় দিয়ে একখানা নাইটি বানিয়ে পরিয়ে দেওয়া হল পুঁটিকে। বছর ঘুরতেই বণিকবাড়ির বৌ হয়ে চলে গেল পুঁটি। কম করে বিশ-পচিঁশবার শাশুড়ির মুখে এই গল্প শুনেছে লোকে।

শাশুড়ি নিজেও গুরুর দেওয়া পবিত্র বস্ত্র উত্তরীয় করে পরেন। সন্তুর মতিস্থিরতার জন‍্য গুরুদেবের মন্ত্রপূত কাপড়ের একখানা ইজের বানিয়ে পরাতে গিয়েছিলেন নাতিকে। নাতি আর তার বাপের তুমুল চীৎকারে শেষে বাধ‍্যা হয়ে একখানা রুমালে এসে সমঝোতা করেছেন। যদিও ছেলেকে কথা শোনাতে ছাড়েননি। “তোরা কি অন্ধ? শুদ্ধ বস্ত্রের মহিমা জানিস নে? যে রাজ‍্যের প্রজা তোরা, সেই রাজ‍্যের রাণী মা-কেও দেকেও কি শিখিস নে? শীত গ্রীষ্ম বর্ষা ঘাড়ে থাকে শ্বেত উত্তরীয়। কেমন স্বর্গ মর্ত‍্য পাতাল দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। কিসের জোরে?”

বিরক্ত হয়ে সন্তুর বাবা বলেছিলেন, “ডানলপের টায়ার দিয়ে বানানো হাওয়াই চপ্পলের জোরে।”

“মুখু‍্য!” নেভাননী না দমে বৌমাকে ধরেছিলেন, “বুঝলে বৌমা, আমাদের গুরুদেব বলেন, মেরুদণ্ডের ঠিক নীচে আছে মূলাধার চক্র। ঐখেনেই কুণ্ডলী পাকিয়ে ঘুমিয়ে আছে সর্প কুণ্ডলিনী। ওই আবাগীর বেটির সব ঘুম ছুটিয়ে এক্কেরে হড়হড় করে খিঁচে টেনে নিয়ে আসতে পারলেই কেল্লা ফতে! আর সেই কাজটি করতে পারে একটি শুদ্ধ বস্তর। বস্ত্র কি যে সে জিনিষ! আমরাই বস্ত্র। পরিধান আর পরিধেয় একই মুদ্রার দুটো পিঠ!”

“ছাতু!” বলে সন্তুর বাবা রাগ দেখান। মন্দিরা অবিশ‍্যি শাশুড়ির কথা সবটা ফেলতে পারে না। সে খাটে বসে রুদ্ধশ্বাসে পা দোলায়। নেভাননী বৌমার নাড়ি চেনেন। ফলাও করে বলে যান, “গুরুদেব তো বলেছেন, শুধু কল্পনা করলেই সিদ্ধলাভ। যে মন্ত্রপূত বস্তরটি তুমি পাবে সেইটেকে দড়ি কল্পনা করে কুলকুণ্ডলিনীকে হেঁইও হেঁইও মারো টান…”

দরজার ফাঁকে ভেসে ওঠে ব‍্যঙ্গভরা ছেলের মুখ — “কুণ্ডলিনী হবে খান খান!”

এখন চায়ের জন‍্য মুড়িভাজা আর ফুলুরি তেলেভাজা টেবিলে সাজাতে সাজাতে মন্দিরা ভাবল, শাশুড়ি যেমন বলেন পবিত্র বস্ত্রের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম তন্তু না কি আমাদের ভেতরের শুভশক্তিকে আকর্ষণ করে, তা হয়ত বা সত‍্যিই হবে। তাই তো মেধা থাকা সত্ত্বেও সন্তেটার কিচ্ছু হচ্ছে না। ইজেরের বদলে রুমাল! নাকের বদলে নরুণের মতনই। গুরুদেব শাশুড়িকে বলেছিলেন, পবিত্র বস্ত্র বিস্তীর্ণ যত হবে, ততই মানব জমিন ফসল ভরা হবে। মনটা বড্ড খুঁত খুঁত করতে লাগল মন্দিরার।

ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে পরীক্ষা শুরু। কি কুক্ষণে টেস্ট পরীক্ষায় ফাটিয়ে স্কোর করেছিল, ফুলুরি চিবোতে চিবোতে উদাস হল সন্তু। মার এক্সপেক্টেশনের পারদ যেভাবে চড়চড় করে চড়ছে তাতে ল‍্যাদ খেয়ে কালকের দিনটাও বই মুখে করে ঘরে খিল মেরে পড়ে না থাকতে হয়!

বন্ধ জালনা অল্প খুলে সন্তু দেখল, প‍্যাণ্ডেলের সাদা কাপড়ে গেরুয়া আর বাসন্তী গাঁদার মালা লাগান হচ্ছে। রাহুলদের দলটা ভ‍্যাবলকাকুর রকে বসে এগরোল সাঁটাতে সাঁটাতে রাজা উজীর মারছে। ক্লাবের ছেলেরা এই বড় বড় কড়া ডেকচি গামলা নামাচ্ছে ম‍্যাটাডোর থেকে। সেক্রেটারি ভাণ্টুদার এই শীতেও কপালে ঘাম! মনটা বড়া উচাটন হয়ে গেল সন্তুর। এই কি একটা জীবন! শুধু বইমুখে ধামসাও। রগড় নেই, ফুর্তি নেই, আড্ডা নেই, ঘুড়ি নেই… ধুউস্স্! মনে পড়ল গতবার বাজি রেখে বেশি চাঁদা তোলার প্রতিযোগীতা, জেতা বাজির টাকায় দেদার ঝাল ফুচকা, খিটখিটে বুড়ো জহর দাদুর সেই এক পেটেণ্ট প‍্যাঁচ “সরস্বতী বানান বল তো? অ‍্যাঁহ্, চাঁদা চাইতে এয়েচে! ভাগ্!” শুনে ছেলেদের কি হাসি!

জালনাটা আস্তে বন্ধ করে দিল সন্তু!

সন্তুদের বাড়িতে ঠাকুরদার শখের কবিরাজীর ঘর আছে একখানা। এক সময় গুচ্ছের জড়িবুটি, শেকড় বাকড়, কাঁচের বয়েম, শিলনোড়া, হামানদিস্তা, হাঁপর, মাটির উনুন এসব থাকত। ঠাকুরদা মারা যাওয়ার পর থেকে ঘরটা গুদোমঘর হিসেবেই আছে।

পাড়ার দুর্গাপূজা, কালীপূজা, সরস্বতীপূজায় ক্লাবের ছেলেদের গুদোমঘরটা ভাঁডার হিসেবে ব‍্যবহার করার পূর্ণ অনুমতি দিয়ে রেখেছেন সন্তুর বাবা। সেই সুবাদে দশবার করে লোক ঢুকছে উঠোনে। অন‍্যান‍্য সময়ে কিছু নয়, এখন ছেলের পরীক্ষা বলে কথা। একটু যদি জ্ঞানগম‍্যি থাকে পাড়ার লোকের! এই ঝন্ঝন্ করে পূজার হাঁড়ি পাতিল, থালা বাসন রাখছে তো এই বড় ঘট, ছোট ঘট, মুচি ঘট। আছে বিসর্জনের বড় বাসন। আরও পূজার সামগ্রীতে ঘরটা ভরা, তিলধারণের জায়গা নেই। সদর দরজা হাট খোলা। যখন যেমন মর্জি লোক ঢুকে আসছে।

রাত্রের রুটি করতে করতে পাড়ার লোকের উপর মনে মনে রাগ ঘনিয়ে এল মন্দিরার। এই যে বাচ্চাগুলোকে সে সমানে বলে যাচ্ছে, তবু এই জালনার সামনেই বল পেটাবে। চেঁচাবে। পাশের বাড়ির ময়না কি জানে না যে সন্তু মাধ‍্যমিক পরীক্ষার্থী? তবু সকাল বিকাল বাজখাঁই গলায় গলা না সাধলে তার চলে না। এছাড়া আছে ফেরিঅলা, ভিখিরি, কাজের বৌগুলোর অকারণ হাসাহাসি, বাড়িতে বাড়িতে টিভি সিরিয়ালের কোঁদলামি, নাটক, দাপট। এই পরিবেশে পড়াশোনা?

যে যুগ পড়েছে! অন্ততঃপক্ষে খান আষ্টেক তারাবাতি কেরিয়ারের আকাশে চমকাতে না পারলে ভবিষ‍্যতের মাঠে আলেয়ার আলোতে যে গরু হয়ে চরতে হবে, তা কে না জানে!

এমন সময় রান্নাঘরের জালনা দিয়ে মন্দিরা দেখল এক ছোকরা গেট খুলে ভোজ‍্যের তরি তরকারি নিয়ে ঢুকছে। তাকে দেখেই মাথায় হঠাৎ একটা চিন্তার বিদু‍্যৎ খেলে গেল। জালনা দিয়ে হেঁকে মন্দিরা বলল, “অ‍্যাই, কাল পুজো কটায় শুরু রে?”

ছেলেটা ঘাড়ের সবজির ডালা সাবধানে উঠোনে নামিয়ে বলল, “কাকিমা, আমি তো ঠিক জানি না। তবে ঠাকুরমশায় আছেন তো প‍্যাণ্ডেলে। ডাকব?”

মেঘ না চাইতে জল পাবার আনন্দ ফুটে উঠল মন্দিরার চোখে মুখে। “ওমা! বাসু আছে? বলিস তো দাঁড়াতে। আমি আসছি।”

বাসু এ পাড়ার ধরা বাঁধা পুরুত। দুর্গা কালী সরস্বতী ছাড়া ঘরে ঘরে লক্ষ্মীপূজাও করে। পেশায় অবিশ‍্যি সে কর্পোরেশানের কেরানী। বয়েস বেশি নয়। অবিবাহিত, বেশ জোগাড়ে টাইপের গুছনো ছেলে।

শাশুড়িকে টিভি সিরিয়ালে ফৌত দেখে গায়ে একটা শাল জড়িয়ে প‍্যাণ্ডেলের দিকে এগিয়ে গেল মন্দিরা। ভাণ্টু আর বাসু সিগারেটে টান দিচ্ছিল, দূর থেকে মন্দিরাকে দেখে ফেলে দিল। এ পাড়ায় এখনও কিছু সাবেকীয়ানা আছে।

ভাণ্টু হেঃ হেঃ হেসে বলল, “বৌদি, আপনার কথামত দেকুন কিশোর-শানু-শ্রেয়াকে আজ পাড়ায় ট‍্যাঁ ফোঁ করতে দিইনি!”

মন্দিরা একটু কৃতজ্ঞতার হাসি হেসে বাসুকে বলল, “এদিকে এসো, কথা আছে।”

বাসু কিঞ্চিৎ অবাক হয়ে বলল, “কী ব‍্যাপার, বৌদি?”

ষড়যন্ত্রের গলায় মন্দিরা বলল, “আচ্ছা বাসু, সরস্বতীর ঘটের শাড়িটা কী করা হয়?”

“ও তো কোন আশ্রমে দান করা হয়,” বলল বাসু।

“না। এ বছর কোন দান নয়। শাড়িটা আমি নেব। তুমি সরস্বতীর শাড়িটা আমার জন‍্য আলাদা করে তুলে রাখবে। আর শোনো, কাকপক্ষীতে যেন এ কথা টের না পায়।… আচ্ছা বাসু, আর একটা কথা।” মন্দিরা চিন্তিত হয়ে শুধোল। “বস্ত্র ধারণ করা আর ঘরে রাখা কি একই ফলদায়ক?”

ভাণ্টু অনেকক্ষণ থেকে ক্লাবঘরে গিয়ে দু পাত্র খাবারের ইশারা দিচ্ছিল। বাসু তাড়াতাড়ি বলল, “একই ব‍্যাপার। এই যেমন ধরেন আংটি! সে আপনি আঙুলে পরুন বা কৌটোয় রাখুন, থাকবে তো আপনার কাছেই, তাই না? ও আপনি ভাববেন না, শাড়ি আমি দিয়ে যাব আপনার কাছে। আপনি রোজ শাড়িতে দুটো ফুল, ধূপবাতি দেখাবেন, ব‍্যস!”

পুজোর দিন সন্তু উপোস করে মা’র পরামর্শ মতন ছাঁকা ছাঁকা নাম্বার তোলার বিষয়গুলো, যেমন অঙ্ক, জীবনবিজ্ঞান, ভৌতবিজ্ঞানের খাতাবই সরস্বতীর পায়ে মাথা খুঁড়তে জমা দিয়ে এল। অঞ্জলি দিয়ে, পেটপুরে খিচুড়ি-লাবড়া, পায়েস-চাটনি সাবড়ে, বন্ধুদের সাথে ঘুড়ি উড়িয়ে আড্ডা মেরে দিনটা ফুরফুর কেটে গেল।

সরস্বতীপুজোর পরদিন সকালে দধিকর্মা। সন্তু আশীর্বাদী ফুলভরা বইপত্তর নিতে গেলে মন্দিরা বলল, “বাসুকাকাকে বলবি মা যেটা দিতে বলেছিল যেন তোর হাতেই দিয়ে দেয়।”

“কী মা?” সন্তু অবাক।

মন্দিরা চোখ পাকাল। “তোর অত কথায় দরকার কী?”

পুজো প‍্যাণ্ডেলে তখন ছিষ্টির ভিড়। যাদের নামে পুজো হয়েছে তারা ডালা নিতে ভিড় জমিয়েছে। কারোর আবার বাচ্চাদের হাতে খড়ি হয়েছে, তারা যে যার পুজোয় দেওয়া স্লেট খড়ি দোয়াত কলম গুটিয়ে নিতে ব‍্যস্ত। কারোর চুলের কাঁটা, জরির ফিতে কাল সন্ধ‍্যেবেলায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে হারিয়ে গিয়েছিল, তার গরু-খোঁজা চলছে। পুরুত বাসুর আজও নাক চুলকোবারও সময় নেই। এই দুটো দিন তার ব‍্যস্ততার সীমা থাকে না। সন্তু গিয়ে বলল, “ও বাসুকাকা, মা’র জিনিষটা দাও।” বাসুর পাশেই কয়েকটা প‍্যাকেট রাখা ছিল। একখানা তুলে দিল সন্তুর হাতে।

গঙ্গাজল ছিটিয়ে বড় আলমারিটার উঁচু তাকের একটা কোন শুদ্ধ করে রেখেছিল মন্দিরা। ছেলে প‍্যাকেট হাতে ঢুকলে ভক্তিতে গদগদ হয়ে প‍্যাকেটটা ছেলের মাথায় ছুঁইয়ে আলমারিতে রেখে দিল। এবার সাক্ষাৎ সরস্বতীর শাড়ির বিস্তীর্ণ আঁচল ধরে তার ছেলে সাফল‍্যের মাঠে সোনার ফসল কাটবে। মনে মনে বড্ড শান্তি পেল মন্দিরা।

দেখতে দেখতে ফাল্গুন মাস পড়ল। ছেলের পরীক্ষাও শেষ হল। এতদিন নিষ্ঠার সাথে সরস্বতীর পবিত্র শাড়িতে দুটো ফুল দিয়ে নিয়মিত ধূপ আরতি দিয়েছে মন্দিরা। ছেলের পরীক্ষা তো নয়, যেন তারই পরীক্ষা শেষ হল! স্বস্তিতে বারান্দায় দাঁড়িয়ে এক বিকেলে চুলের জট আঁচড়াচ্ছে, পাশের বাড়ির ময়না এসে দাঁড়াল। এ কথা সে কথার পর বলল, “দিনকাল কি পড়ল, বৌদি! আমাদের পাড়াতেও শেষে চুরি?”

শুনে অবাক হল মন্দিরা। তাদের পাড়াটা অন‍্যান‍্য অনেক জায়গার থেকেই বেশ নিরাপদ।

ময়না বলে, “চামেলী বৌদি কাল রাতে ছাদে ধূপধাপ আওয়াজ শুনেছে। আর সরস্বতীপুজোর দিন কী হয়েছে তা তো জানোই।”

মন্দিরা মাথা নাড়ে। “না তো!”

“ও মা, জানো না? বাসুদার ঘড়ি, ওয়ালেট সব হাপিস!” শুনে মনটা খারাপ হল মন্দিরার।

মাধ‍্যমিকের রেজাল্ট বেরলে দেখা গেল সন্তু মাকে নিরাশ করেনি। তার ভবিষ‍্যতের মিল্কিওয়েতে ন’ খানা তারা বাতি জ্বলছে! “জয় গুরুদেবের রুমালের জয়” বলতে বলতে পাড়ার বাড়ি বাড়ি বোঁদে বিলোলেন নেভাননী।

আলমারি থেকে প‍্যাকেটটা ছেলের হাতে দিয়ে মন্দিরা বলল, “শ্রীগুরু থেকে পঞ্চাশ টাকার মিষ্টি কিনে বাসুকাকাকে দিয়ে আয়। আর এই প‍্যাকেটটাও নিয়ে যা। সাবধানে নিবি, পড়ে না যেন হাত থেকে।”

মা’র কথা মতন প‍্যাকেট আর মিষ্টির বাক্স নিয়ে সন্তু বাসুর দরজায় বেল দিল। দরজা আর খোলে না। কী ব‍্যাপার? “ও কাকা, ও কাকা,” বলে বার কয়েক চিল্লাতে “কে? কে রে?” বলে ভারি বিরক্ত গলার আওয়াজ এল। বাসু জালনা দিয়ে উঁকি মারতে সন্তু বলল, “আমি। মা পাঠিয়েছে।”

ছয় ছ’খানা তালা খুলে বাইরে এল বাসু। তার হাতে জিনিষগুলো ধরিয়ে সন্তু বলল, “আমার পাশের মিষ্টি। খেও।”

কেমন তোবড়ানো মুখ আর ঘোলা চোখে সন্তুর দিকে চেয়ে রইল বাসু। “কেসটা কী,” ভাবল সন্তু। প‍্যাকেটের ভেতরে ততক্ষণে চোখ চালিয়েছে বাসু। ধীরে ধীরে তার চোখ ভাঁটার মতন হল। নিশ্বাস বড় বড়। হঠাৎ এক লাফে সন্তুর সামনে ছিটকে এসে তাকে এক থাপ্পড় কষাতে গেল বাসু। “আমার সঙ্গে মাজাকি? তবে রে!”

সন্তুর ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় তৈরিই ছিল। বেগতিক দেখে সে চোঁ চাঁ দৌড় লাগাল। তার আর কোন সন্দেহ রইল না যে বাসু পাগল হয়ে গেছে। ছুটতে ছুটতে সন্তু ষাঁড়ের মতন চিল্লাতে লাগল, “হেল্প! হেল্প! পাগলা বাসু! বাসু পাগলা!”

আর তার পিছু পিছু পাগলা ঘণ্টির মতন নড়বড়ে হয়ে বরাবার ছুটে আসতে লাগল বাসু।

দুজনেই ধড়াম ধড়াম করে আছড়ে পড়ল সন্তুদের বাড়ির দরজায়। চীৎকার চেঁচামেচিতে বেরিয়ে এলেন নেভাননী। ছুটে এল  মন্দিরা। পাড়ার লোক দু’এক করে জমা হল। ছেলের সাফল‍্যে অফিস থেকে কেকের বাক্স হাতে নিয়ে ফিরছিলেন সন্তুর বাবা। সন্তুর পিছনে বাসুকে সাঁই সাঁই করে উল্কাপাতের মতন ছুটে বেরিয়ে যেতে দেখে তাঁর চোখ কপালে উঠে গেল। তিনি বাসুকে হেঁকে বললেন, “অ‍্যাই বাসু! নেশা করেছিস না কি?”

নেভাননী খনখনে সুরে বললেন, “কী ব‍্যাপার কী রে তোর? খোকাকে এমন চোরের ধাওয়া করে এলি যে বড়?”

মন্দিরা ঝঁাজি মেরে বলল, “ঘটে কি গোবর না কি তোমার? ছেলেটা পাশের মিষ্টি দিতে গেল, আর ওকে তুমি এমন দৌড় করালে?”

সবার অভিযোগ শুনে বাসু ফোঁচ করে কাঁদতে গিয়ে ফিক্ করে হেসে ফেলল। চোখের কোনের জল মুছে, নাকের সর্দি টেনে বলল, “বৌদি, আজ আমার মগজের ঘটে পূর্ণাহুতি পড়ল কি না, তাই আনন্দে সব গুলিয়ে গেছে!”

এই না বলে সে তার হাতে ধরে রাখা সেই প‍্যাকেট থেকে বার করে আনল একখানা লাল টি শার্ট, একটা সবুজ পাজামা, কালো জাঙ্ঘিয়া, একখানা ঘড়ি আর ওয়ালেট!

“এ সবের মানে কী?” জিভ জড়িয়ে গেল মন্দিরার।

“বৌদি,” হাত জোড় করে বাসু বলল, “পাজামা-টি শার্ট খুলে ধুতি চাদর পরে পুজোয় বসেছিলাম দধিকর্মার দিন। শিউলির দেওয়া ঘড়িখানাও পুজোর দিনে যেমন খুলে রেখেছিলাম, সেদিনও তাই খুলেছি। বিসর্জন হলে আপনার অর্ডারি সরস্বতীর শাড়ি প‍্যাকেট করেই রেখেছিলাম। কিন্তু ভিড়ের ভারে ভুল করে প‍্যাকেট বদল হয়ে গেছে বুঝিনি!”

মন্দিরার পা কাঁপছে। বাসু বলল, “লজ্জায় পড়ে আপনাকে জিজ্ঞাসাও করিনি, ভেবেছি আমার জিনিষ পেলে আপনি কি আর লুকোবেন? আপনার কাছ থেকে যখন কোন খবর এল না, তখনি বিপদে পড়লাম। বাসি কাপড় গেছে যাক। ওয়ালেটের টাকার কথাও ভাবিনি। কিন্তু ঘড়িটা ছিল শিউলির দেওয়া।” বাসুর পাংশু মুখে হালকা রং ধরল। “টিউশানির টাকায় আমায় উপহার দিয়েছিল শিউলি। হাতে না দেখে জিজ্ঞাসা করতে ধরা পড়ে গেলাম। আমার উপর রাগ করে সে কথা বলা বন্ধ করে দিলে। অনেক বোঝাতে গিয়েছি, চিড়ে ভেজেনি। আমার অসাবধানতা ক্ষমা করেনি। চিন্তায় ভাবনায় রাতের ঘুম চলে গেল। রাতদিন যখন শুধু কিশোরদাকে দিয়ে বুকের ক্ষতে গানের মরমপট্টি করাচ্ছি — ‘আশা ছিল, ভালোবাসা ছিল/ আজ আশা নেই, ভালোবাসা নেই’ — তখুনি এই শ্রীমান আমার সব আশা-দূরাশার পেণ্ডুলামের মাঝে হারানো প্রাপ্তি নিরুদ্দেশ নিয়ে দোরগোড়ায় হাজির। মাসখানেকের নিরম্বু উপোসী শুকনো মগজ, বৌদি, হঠাৎ করে পোলাও-কালিয়া দেখে সামলাতে পারেনি। হামলে পড়েছে।” দুঃখিত হয়ে বলল বাসু।

মন্দিরার মাথায় তখন শ’য়ে শ’য়ে ভোঁ ভোঁ মৌমাছি। সরস্বতীর শুদ্ধ শাড়ি ভেবে সে কি না রোজ ফুল চড়িয়ে ধূপ দেখিয়েছে পুরুত বাসুর ঘেমো বাসি পাজামা-জাঙ্ঘিয়ার প‍্যাকেটকে? ছি ছি! ছেলের সামনে এখন মুখ দেখায় কি করে মন্দিরা, এই যখন ভাবছে, তখুনি একখানি সাদা উত্তরীয় ঝুপুস করে এসে পড়ল মন্দিরার মাথায়। তবে কি পতিতপাবন শ‍্যাম? চোখ তুলে দেখলে মন্দিরা, না। নেভাননী। তাঁর গুরুর দেওয়া মন্ত্রপূত উত্তরীয়তে পরিবারের বাঁচাখোঁচা ইজ্জতে পর্দা ঢাকছেন।

Facebook Comments


এই রকম নতুন গল্পের খবর ই-মেলে পেতে সাইন-আপ করুন এখনই!

Leave a Comment: