সিদ্ধেশ্বরী মন্দিরে দৈনিক এক টাকার সুখশান্তি কেনার ভেট চড়িয়ে বহুযুগের সাথী কোলাপুরিটার মুখে নিজের পা দু’খানি গলিয়ে নিলেন হরলাল মিত্তির। নেবুবাগান লেন আর বাগবাজার স্ট্রীটের ক্রসিং পেরিয়ে পশুপতি লেনে তাঁর আপিস। তিনি লোকাল র্যাশন দোকানের বড়বাবু। আর আছে সহকারি নসু আর বাবুলাল।
হরলালবাবু যে চাকরিটা করেন, সেটা তাঁর একেবারেই মনঃপূত নয়। তিনি চেয়েছিলেন যশস্বী কবি হতে, হয়ে গেলেন র্যাশন দোকানের কেরানি। স্বভাব কবির কবিত্ব রোজ সকালে ভাতের পাহাড়ে কলাই ডালের গুহায় দুটো চিমসেপানা ভাজা মাছ সাথে তাঁর স্বভাবভুলো মনের জন্য গিন্নীর মুখের অভাব অভিযোগের লঙ্কা ফোড়ন দিয়ে মেখে গোগ্রাসে গিলে, কুচো সুপুরি মুখে ফেলে, কালো ছাতা বগলে, সদর দরজার উপর দেওয়ালে ঝুলতে থাকা স্বর্গীয় পিতা এবং মাতাঠাকুরাণীর ছবিতে হাত জোড় করে, বিড়বিড়িয়ে নোনাধরা গলিপথ বেয়ে উল্কাগতিতে রাজপথে নেমে কুঁদঘাট টু বাগবাজারের মিনিতে ধস্তাধস্তি করতে করতে সব ভ্যানিশ!
if your browser doesn’t display Bangla script properly.
তবু কি রক্ষে আছে? পুন্নিমার চাঁদটাকে একেবারে ঝলসানো রুটি না বানিয়ে সংসার রেহাই দেবে না। হঠাৎ সরকার থেকে পরওয়ানা এল সব চলতি র্যাশন কার্ড বাতিল হয়ে ডিজিটাল কার্ড হবে। তাই রিজিওনাল হেডবাবুদের কম্পু্যটার শিক্ষা আবশ্যিক। কাছাকোঁচা ল্যাজেগোবরে হল হরলালবাবুর। তবু শিখলেন। কিন্তু গোড়ায় গলদের বিপদ আটকাবে কে? নতুন সিস্টেমে দেখা গেল ভুল ভরা।
গ্রাহকের পরিবারে বাপ মা-এর নাম আছে তো সন্তানরা গায়েব। কোথাও বা পাইকপাড়ার গোপালকে মাসকাবারি চিনি আনতে উজিয়ে যেতে হবে বারুইপুর। যার ভাগ্যপ্রসন্নে পরিবারের সবাই যে যার খোপ মতন বসে গেছে সেখানে ভুলে ভরা বানান। এমন সব উধোর পিণ্ডি বুধো ঘাড়ে নিয়ে যা হবার তাই হল। সারা শহর তোলপাড়, গালিগালাজ, মারধোর, ইঁট পাটকেল এবং র্যাশন দোকানের কর্মচারীদের কপালের ঈশান কোণে রক্তিম ব্যাণ্ডেজ! সরকার আরও দমন নীতি নিল। সহজে কার্ড করানো এবং কার্ড পাওয়া ক্রমশঃ জটিল হয়ে উঠল।
আগেই বলেছি, হরলালবাবুর আপিসখানা নেবুবাগান লেন এবং বাগবাজার স্ট্রীটের ক্রসিং পেরিয়ে। একটু ভেতর দিকে। চলেছেন মন্দাক্রান্তা ছন্দে। হঠাৎ কানে এল হাসির ছররা। এলাকার মুকুজ্জে বাড়ির ন’ বাবুর ছোট ছেলে দলবল পাকিয়ে বসে আছে দাওয়ায়। ছুটকো ছাটকা টিটকিরি কানে এল, গা করলেন না হরলালবাবু।
এই বঙ্কুবিহারীকে কোথায় পেলেন? আপনি নমস্য লেখিকা | পড়ে দারুন আনন্দ পেলাম।
চৈত্রের শেষ। গরম বাড়ছে তাপে। বাবুলাল অলস ভাবে দাঁড়িপাল্লায় পা ঝুলিয়ে বসে দেশলাই কাঠির পেছন চিবোচ্ছিল। বড়বাবুকে ঢুকতে দেখে তড়াক করে পা নামিয়ে দেয়াল কোনের কালো কুঁজো থেকে ঠাণ্ডা জল গড়িয়ে দিল। “নসু…উ… অ্যাই নসে,” বলে হাঁক পেড়ে জল গলাধঃকরণ করলেন হরলালবাবু।
নসু দোকানের ভেতরে চাল ডাল ভোজ্য তেল চিনি বিস্কুটের বস্তার আড়াল থেকে ‘আজ্ঞে’ বলে বেরিয়ে এলে হরলালবাবু তাকে পাঠালেন ‘দাদা-বৌদির চায়ের দোকান’-এ। “ভালো করে আদা মেরে আনবি!”
খ্যাঁচড়ানো মেজাজ নিয়ে দোকানের সবেধন নীলমণি কম্পু্যটার যন্তরখানা খুলে তাঁর বরাদ্দ চেয়ারে গুছিয়ে বসলেন হরলালবাবু। অভিযোগের চিঠি চাপাটির বাক্স খুলে দেখলেন গিজগিজ করছে তেলাপোকার বংশের মতন। দিনের প্রথম চিঠিটা নিমপাচন গেলার মুখ করে পড়লেন — “রেস্পেক্টেড স্যর, আই অ্যাম হেড অব দ্য ফ্যামিলি। আই হ্যাড বিন মার্কড ডিজিটাইজ্ড। হোয়েন মাই ডিজিটাইজ্ড কার্ড উইল কাম থ্রু প্রপার ক্যানেল (cannel)?”
মনে মনে দাঁত খিঁচিয়ে বললেন হরলাল, “এই তো বাছা, তোমার ডিজিটাইজ্ড কার্ড বাগবাজারের খাল বেয়ে নেচে নেচে আয় মা শ্যামা হল বলে! আর এট্টু ধৈর্য্য ধরো।”
তাকে প্রথামতন উত্তর লিখে দেখেন দ্বিতীয় অভিযোগ। “হোয়াই আই গেট অন্লি থ্রি কেজি রাইস অ্যাণ্ড থ্রি কেজি ওয়েট?” মানে বুঝতে আশমান জমীন তোলপাড় করলেন কিছুক্ষণ। তারপর বুঝলেন মহাশয় wheat অর্থাৎ ‘গম’ বোঝাচ্ছেন, দেহের ভার নয়।
“স্যর!” একটা মিহিগলার আওয়াজে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলেন, ও বাবাঃ, এ যে কলির নটবর! রোগা রোগা প্যাংলা গড়নে বাহারি লাল সরু পাড়ের বাসন্তী ধুতি চাদর। মাথায় বাঁধা লাল গামছা, পায়ে খড়ম। বগলে রং চটা কালো ছাতা কাঁধে ছেঁড়া থলে।
“কী চাই?” বলাতে উত্তর এল — “সুবিচার চাই, বাবু!”
“তা এখেনে কেন? জজ্ মেজিস্ট্রেটের কাছে যাও!” বাবুলাল বললে।
লোকটা এবার হরলালবাবুর পায়ের কাছে এসে বসে পড়ল। “বাবু বাঁচান! পড়ে পাওয়া চোদ্দ আনায় আমার ঝেবন বিষ হয়ে গেল হুজুর!”
“ওঃ, এ তো বহুৎ নাটক দেখছি!” মনে মনে আওড়ালেন মিত্তির মশাই। “তা হয়েছেটা কী শুনি?”
বাপ রে তুমি লিখলে কি করে? আমার ত মাথা ভোঁ ভোঁ করছে! অসাধারণ লিখছ বটে, দিন দিন সুন্দর হচ্ছে।
“বাবু, আজ এক মাসের উপর ধরে আপিসারবাবু আমার ঘরে ঝাচ্ছেন আর শুধুচ্ছেন আমি কার বাপ, কে আমার বাপ, আমার ইস্তিরির মা কে, তার মায়ের বেত্তান্ত, তাপ্পর সব চুপচাপ। কথাটি কইচেন না। কার্ডও হচ্ছে না, আমরা কি না খেয়ে মরব, হুজুর? হাটখোলার র্যাশন দোকান থে’ আমারে এখানে পাঠায়েইল বাবু।”
“আচ্ছা গেরো তো! তোমার নামটা কী শুনি?” নসু সাবধানে চা এনে টেবিলে রেখে বলল, “বাবু, ও বঙ্কু। আগেও এসেছে, আপনি ছিলেন না। ওর কেস তো পুরা জামপ্যাক্ট। প্রচুর কেলো।”
“আঃ, তুই থাম তো! অ্যাই যে বঙ্কু, তুমি সব খুলে বল তো, কী বৃত্তান্ত।”
ছলছল চোখে নসুর কথা শুনছিল বঙ্কু। গামছার খুঁটে চোখ মুছে বলল, “বাবু, বেশ খাচ্ছিনু তাঁতী তাঁত বুনে, কাল হল তার হাতী কিনে। আমি বাবু সামান্য ডুবকির কাজ করি।”
“ডুবকি!” বড়বাবু চোখ গোল করলে বাবুলাল ও নসু হাসাহাসি করতে লাগল। “স্যর, এরা ওই সারাদিন গঙ্গায় চুবে থাকে। কখন কেউ দান ছুঁড়ে ফেললে, সে পয়সা হোক বা সোনাদানা, ছোঁ মেরে তুলে নেয়। আর ওই দশকর্মা ভাণ্ডারগুলোতে জ্যারিকেন ভরে ভরে গঙ্গাজল সাপ্লাই দেয়,” নসু বলল।
“কণ্টিনিউ!” বড়বাবু চা-এ চুমুক দিলেন।
“বাবু, মাসখানে আগের কতা। সারাদিন জলে থেকে সেদিন হাত পায়ের খিল খুলে গেসল। মিতালি দু বাড়ি রান্নার কাজ সেরে আসবে উড়ের দোকানের ফুলুরি তেলেভাজা নিয়ে। সেই ভেবে সবে আমি এক পাত্তর বাংলার ঢোঁক গালে ফেলিচি, ‘ও জামাই!’ বলি তোতা এসে দাঁড়ালে।”
বড়বাবু জানতে চাইলেন, “মিতালি মানে তোমার গিন্নী! আর তোতাটি কে?”
“আজ্ঞে, শালা হুজুর!”
“বেশ! তারপর?”
“মিতালির মা, আমার শাউড়ি না কি তলব করেছে। এক্ষুনি তো এক্ষুনি! আমি হুজুর বলব কী, এই শাউড়ি আমার ঝেবনটাকে এক্কেবারে ঝালাপালা করি দিল। ঝানেন, সব কতায় খপরদারি! তম্বি, হম্বি! আবার তাঁর থানের উপর বসি আছেন আর এক ঠাইরুণ। আঙ্গুরবালা দাসী। আমার শাউড়ি আলতাবালা দাসীর মা হুজুর। ঝেমুন দেমাক তেমুন ম্যাজাজ। গব্বো ধরে না। কী, না, উনার মায়ের পেটের বোন ‘বকুলফুল’ পাতিয়েছিল ‘আকাশফুলের’ সাতে। তাতে কী এমুন বলুন! চাঁদ তারা হীরা মানিক পেলি ঝেনো!”
“ও ফ্ ফ্, দাঁড়াও দাঁড়াও!” বড়বাবু হাঁফ ছাড়লেন। “বকুলফুল তো গাছে ফোটে, আর আকাশফুল ধূপ আমার গিন্নী দু’বেলা ঠাকুরের নাকের ডগায় চরকি ঘোরান। তুমি বলছটা কী, আমি তো কিছু বুঝতে পারছি না।” নসু, বাবুলাল মজা দেখে।
“এ তো অতি সহজ বাবু” — হাতের তেলো মুখের সামনে ফেলে দিল বঙ্কু। “আমার শাউড়ি আলতাবালার মা আঙ্গুরবালা। ধরলেন তো? এখন আঙ্গুরবালার শাউড়ি নেভাননী সই পাতালেন বকুলফুলের সাথে। বকুলফুলের সই আকাশফুল কাঁটাপুকুর বাইলেনের নগেন বসুর নাতির বৌ-এর খাস দাসী।”
“নসু! জল দে রে!” বড়বাবু মাথা চেপে ধরেন। বেগতিক দেখে বঙ্কু বড়বাবুর হাত চেপে ধরে। “বাবু! আপনি এট্টু ঠাণ্ডা হ’ন! এট্টু জিরোন! মাথায় চাপ নেবেন না।”
“চাপ নেব না মানে? তুমি ইয়ার্কি পেয়েছ? ওই নগেন বসুটি কে? বিশ্বকোষের এডিটর নগেনচন্দ্র বসু?”
“আজ্ঞে হ্যাঁ!”
“তোমার আইডেনটিটি প্রুফ কার্ড কেন অফিসাররা বানাতে পারেননি, তা এখন আমি বুঝলুম। তোমাকে আমার এলাকায় পাঠিয়ে কেন ওরা হাত ধুয়ে ফেলেছে জানো?”
বড়বাবুর কথার তোপে চুপসে যায় বঙ্কু। হাত কচলে বলে, “ক্যানো হুজুর?”
“কারণ আমি একটা উজবুক বলে! আমাকে এরা তলে তলে ধাপার মাঠ কেন বলে আমি জানিনা ভেবেছ?” উত্তেজনায় চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ান হরলালবাবু। “আশেপাশের যত আবর্জনা সব আমার খাতায়! আমার এলাকায়! অ্যাঁ? বেশ! আই অ্যাম টেকিং দিস্ চ্যালেঞ্জ ওভার মাই ডেডবডি! আমি তোমার আইডেনটিটির টিকি খুঁজে বার করবই।” আবার চেয়ার টেনে বসে পড়েন মিত্তিরমশাই।
দৌড়ে গিয়ে পাখার নব্টা জোরে করে নসু। কিন্তু সে ভবী ভোলবার নয়। একই ভাবে কলুর বলদের মতন ঘুরে যায়। বাতাস লাগে না কারও গায়ে।
“শোনো, একদম প্রথম থেকে, প্রথম থেকে বল।”
“স্যর,” এবার কাঁদো কাঁদো সুরে নসু বলে, “তালে স্যর রাত গড়িয়ে ভোর হয়ে যাবে স্যর। আমি যেটুকু বুঝেছি আপনাকে বলি?”
“বেশ! শুনি কী বুঝেছ তুমি?”
“স্যর,” সাবধানে খাপ খোলে নসু। “নেভাননী, মানে নীভাননী অবধি বুঝেছেন তো স্যর?”
“নীভাননী?” আতান্তরে পড়া দেখায় বড়বাবুকে।
নসু বলে চলে, “একদম ঘাপলা কেস স্যর। এই বঙ্কুর নাম দু’-তিন জনের র্যাশন কার্ডে চড়ানো আছে বটে, কিন্তু তাদের সাথে এর সম্পর্কের আইডিনটেটিফিকেসন করা যাচ্ছে না কিছুতেই!”
বঙ্কু উথাল পানিতে হাল ধরে। “হুজুর নেভাননীতে মন দিন। সেই যে আঙ্গুরবালার শাউড়ি!”
“আঙ্গুরবালা?”
বাবুলাল মৃদু স্বরে ‘মরেচে’ বলে কপাল চাপড়ায়। ‘স্যরের গাড়ি ব্যাক গিয়ারে যাচ্ছে দেখছি!’
বঙ্কু মরিয়া হয়ে বোঝায়, “স্যর, এট্টু শান্ত হ’ন। একবারটি চোখ বুজুন! বুজুন! অ্যাঁ অ্যাঁ, হ্যাঁ! বাস্! এবার বন্ধ চোখের পাতায় দেকুন হুজুর, আমার সোন্দর ডাগর ডোগর ইস্তিরি মিতালি। মিতালিকে ধরে থাকুন হুজুর! নড়বেন না।”
“বেশ বেশ।” আত্মপ্রসাদের হাসি ফোটে বড়বাবুর মুখে। “এবার আস্তে আস্তে সরে যান আমার শাউড়ির দিকে। আলতাবালা। কেমন? সরেছেন?”
“আলতা! আহা! বেশ, সরলুম।” বড়বাবু তদ্গতচিত্ত।
“এবার আঙ্গুরবালা আসছে হুজুর। আমার দিদি শাউড়ি।”
“এক থাল আঙ্গুর নিয়ে আসছে আমার আঙ্গুরবালা! আহা, মিঠে মিঠে নোনা নোনা!” বড়বাবু বিড়বিড়ান। শুনে তো নসু আর বাবুলালের চোখ ছানাবড়া। বঙ্কু কিন্তু মুচকি হেসে মাজা দুলিয়ে বলে, “বাঃ বাবু বাঃ! আঙ্গুরবালার কাছেই বসুন বাবু। আমি তার শাউড়ি নেভাননীরে ডেকে আনি?”
“যাও যাও! ক্ষীর ননী ছানা যা পারো ডেকে নিয়ে এসো।” বড়বাবু চক্ষু মুদে উদার।
“হুজুর নেভাননীর সই বকুলফুল এয়েচে।”
“বাঃ বেশ বেশ! বকুলফুল! কী মিষ্টি! কী সুবাস, আমার বুক পেট জুড়িয়ে যাচ্ছে।” নসু বাবুলালকে ধাক্কায়। “এসব কী হচ্ছে রে! ব্যাটাচ্ছেলে বঙ্কুটা আমাদের সাদাসিধে বড়বাবুকে পাগলে না দেয়!”
ওদিকে বঙ্কুর ধারাবিবরণী চলতেই থাকে। “বাবু, বকুলফুলে আছেন তো?”
বড়বাবু মধুর হাসেন। “আমি জাত ভোমরা হে, সব ফুলেই আছি। তবে বকুলফুলের মজাই আলাদা।”
বঙ্কু বিজ্ঞ হাসে। “বকুলফুলের সই-গুমোর ধরে না যে মাগীর সই আকাশফুল। আকাশফুলে এসেছেন বাবু?”
“ফুলে ফুলে দুলে দুলে মধুময় আমি,” বলে গদ্গদ্ হ’ন বড়বাবু। “এসেছি! এসেছি!”
বঙ্কু বলে, “মেরে এনেছেন হুজুর। আকাশফুলে দুলতে থাকুন। এবার এল সর্বনাটের গুরু ঠ্যাইরুণ যিনি, আকাশফুলের সই ঠাইরুণ এলোকেশী দাসী। তিনিই হুজুর মরণকালে তাঁর র্যাশন কার্ডে আমার নাম চাপিয়ে যান। আমি এসব কিছুই জানিনা। আমার শাউড়ি আমারে ডেকে ওই সন্ঝে বেলায় বল্লে, ‘ছোঁড়া, তোর তো নটারি নেগেছে রে! আমার মায়ের শাউড়ির দিদির সইয়ের সইয়ের সই তোর আর মিতালির বে-তে কিছু দিতে পারেনি, তাই তোদের খোরাকির উপুরি ব্যবস্তা করে দে গেছে!’ এখন হুজুর উপুরি খোরাকি কী! আমার হকের খোরাকিই বন্ধ হতে বসেছে। সব আপিসার বাবুরা আসেন খোঁজ কত্তে আমি এলোকেশীর সম্পক্কে কে হই জানতে! মিতালিতে-আমাতে মুখ খুলতেই তেনারা সব ভোঁ ভাঁ!”
“বাবু! বাবুউ!” চকিতে বঙ্কু, বাবুলাল আর নসু দেখে সাপুড়ের বাঁশির সামনে আলতো দুলতে থাকা সাপের ফণার মতন দুলছে বড়বাবুর মাথা। বড়বাবু কী যেন বিড়বিড় কচ্ছেন। নসু তার কানটা বড়বাবুর মুখের কাছে ধরে।
“এলোকেশী দাসী! সব্বোনাশী হাসি! সিদ্ধেশ্বরী খুশি! ওরে নসু, আন দিকি নস্যি!”
“বাবু! বাবু!” নসু বড়বাবুকে ধরে নাড়া দেয়। চোখ খুলেই বড়বাবু উল্লাসে চীৎকার করে ওঠেন — “ইউরেকা! ইউরেকা! নসে, বাবুলাল, আমি এ ব্যাটাকে লোকেট করে ফেলিচি। এই বঙ্কুবিহারী হল সইয়ের বৌ-এর বকুলফুলের বোন পো বৌ-এর নাত জামাই। যা শালাকে এণ্ট্রি করা আর খোরাক দে! জয় মা সিদ্ধেশ্বরী!” বলে হরলালবাবু দোকানের বাইরে রাখা কোলাপুরিটায় বিজয় গর্বে পা গলালেন। ধাঁধার উত্তর পেতে পেতে রবিমামা অলরেডি হামা দিতে শুরু করেছেন পশ্চিমে। তা হোক, আজ সকালে গিন্নীর অর্ডারি বকেয়া মালের লিস্টিগুলো দিব্যি ঝরঝরে মনে গেঁথে আছে, এখন পটাপট গেঁথে তুলবেন।