এপ্রিলের ফুল

বয়েস যখন দু’ কুড়ি পার অথচ মনের বাসনাটা ফুলদল শাখাপ্রশাখায় মেলে উঠছে না কিছুতেই, তখন বুঝলাম ‘গোপন কথাটি রবে না গোপনে।’ মামার নাকের ডগায় হাত ফেলে দিয়ে বললাম, “দ‍্যাখো তো, লেখক টেখক হতে পারব কি না!”

মামা কিছুক্ষণ হাতের বদলে মুখ জরিপ করে বলল, “কেন? তুই তো ম‍্যাগাজিন-ট‍্যাগাজিনে লেখা পত্তর দিস মাঝে মাঝে! সে সব বেরোয়ও কখনো কখনো। আবার কী লেখক হবি, শুনি?”

Download this post in PDF format

if your browser doesn’t display Bangla script properly.

“ধুস্!” একটা টুল টেনে মামার সামনে গ‍্যাঁট হয়ে বসলাম। “দ‍্যাখো তো, সত‍্যিকারের লেখক হতে পারব কি না!”

“হেঃ হেঃ হেঃ, বেড়ে বলেছিস তো! সত‍্যিকারের লেখক? তা তারা কেমন হয় শুনি?”

গম্ভীর হয়ে বললাম, “যারা কালের সীমা ছাড়িয়ে পাঠক মনে দাগ রেখে যায়, মানুষকে কখনো ভাবায়, কখনো হাসির হুল্লোড়ে দুঃখ ভোলায়, করুণ কথায় কাঁদায়…”

“থাম! থাম! বলি, লেখা অত সোজা না কি রে? মানব মনে দাগ ফেলবে! মানব মন, তাও আবার এ যুগের মানব মন, তোমার ওই কর্পোরেশনের রাস্তা নয় যে সাদা চুনা বালতি নিয়ে দাঁড়াবে আর স‍্যাঁটাস‍্যাঁট দাগ মেরে দেবে। কত রাম শ‍্যাম যদু মধু পারেনি, আর ইনি কোত্থেকে এলেন মানব মন দাগতে। যা, যা, দিক্ করিসনি।”

রেগেমেগে খাপ্পা হয়ে উঠে দাঁড়ালাম। বললাম, “মামা! ইট্স্ নট্ ফেয়ার। ম‍্যাগাজিনে লিখি তো কী, অ‍্যাঁ? অত ঝামেলা আমার পোষায় না বাপু। এক তো ডিম পেড়ে তিন মাস বসে থাকো, তারপর সেই ডিম কোন ম‍্যাগাজিনের পাতায় দয়া করে ফুটলো, ফাটলো — তারপর তার ফ্রাই, কারির আনন্দের স্বাদ নাও। ওসব আর ভাল্লাগেনা। তারপর এখন চারিদিকে যা অবস্থা! প্লাস্টিক ডিমের রমরমায় আসল ডুবতে বসেছে। লোকে ভয়ে এখন ডিম খাওয়াই ছেড়ে দিয়েছে, ডু ইউ নো দ‍্যাট?”

মামার ক্রমাগত গোল হতে থাকা চোখদুটোকে অগ্রাহ‍্য করে বললাম, “আমি স্বাধীন হতে চাই। আমার পাঠকরা আমায় ভালোবেসে পড়বে। কারও দয়াদাক্ষিণ‍্যে আমি চলব না।”

“অ‍্যাই! ইদিকে আয়, ইদিকে আয়… বোস!” মামা হুঙ্কার দিলে ঢপ করে বসে পড়লাম টুলে। বাড়ানো হাতে এক চাঁটা মেরে মামা বলল, “ভালো সাহিত‍্য লিখবি যে, মূলধন কী শুনি? কী পড়েছিস? দিক্পাল সাহিত‍্যিকদের পড়তে তো হবেই। তবেই না লেখায় গুণ আসবে।”

“তাই বলে সবাইকে যে নেরুদা পড়তে হবে, তার কী মানে আছে শুনি?”

ঠিক সময়েই মা মামার জন‍্য চা নিয়ে ঢুকছিল। অবাক হয়ে বলল, “নেরু আবার কবে কী পড়লো রে পুপুল? রকেই যার জীবন যাপন, ও তো বইয়ের সোজা উল্টোও বোঝে না।”

“আঃ মা, এ আমাদের পাড়ার উটকো নেরুদার কথা হচ্ছে না। তুমি থামবে?” বিরক্ত হয়ে বলি।

“কেন? পাড়ার বখাটে নেরুদা কী দোষ করলো? ওর কি জীবনে কোনো কথা নেই? কিছু বলার, কিছু বোঝার, কিছু অনুভব করার নেই?” কর্তা কখন ঘরে ঢুকেছে জানি না। চুপ করে রইলাম। “ওসব প্রকাশক-ফাঁকাশক ছাড়ো। স্বাধীনতার স্বাদ পেতে চাও তো ব্লগে লেখো। তোমার একান্ত আপন। লেখো যতো পারো।”

“আইচ্ছা? আর পড়বে কেডা শুনি?” রাগলে মামার বাঙাল বেরোয়।

“কেন? পাঠক পড়বেন!”

“তগো আনবেডা কে? তুমি?”

“দেখুন মামা,” কর্তা বললে, “বাঙালী পাঠক রসবোধের রাজা। সেরা পাঠক। লেখায় টক ঝাল মিষ্টির স্বাদ পেলে টপাটপ সাঁটাবে। তার আগে পাঠকদের সাথে আন্তরিকতার, বন্ধুত্ব ও সহমর্মীতার বাঁধন গড়ে তোলো। জানেন তো, ‘একাকী গায়কের নহে তো গান, মিলিতে হবে দুইজনে/ গাহিবে একজন খুলিয়া গলা, আরেক জন গাবে মনে।’”

কর্তা উচ্ছ্বাসভরে বললে, “পুপুল, হাটে-বাটে-ঘাটে কত নাম না জানা মানুষের নাম না জানা কথা। ব্লগের চালচিত্রে বেঁধে ফেলো তাদের। সাধারণ মানুষের সাধারণ মনের আবেগ আনন্দে ভরে উঠুক তোমার ব্লগের নক্সাদার গালচেটা। আধফোটা হাসি, বিন্দু কান্না, বুকভরা আশা কুঁড়ি ফুটে উঠুক ব্লগের বাগিচায়। দেরী কিসের! ‘দুয়ারে প্রস্তুত গাড়ি’…”

তখন উৎসাহের ডামাডোলে এক লাফে গাড়ি জুড়ে বসে পড়লাম। দিনক্ষণ কিচ্ছুটি খেয়াল করিনি। আর কী কাণ্ড! হাজার হাজার পাঠকবন্ধুদের উৎসাহ উদ্দীপনা আর শুভেচ্ছার রশি আমায় ক্রমশই টেনে নিয়ে গেল নতুন লেখনীর পক্ষে।

আজ বং ঢং ডট কমের এক বছরের জন্মদিন পালন করতে গিয়ে দেখি, এই রে! করবি তো কর, জন্মদিনটা শেষে পয়লা এপ্রিলই হল! ফুল্স্ ডে!!

মনে দুঃখু হল। আমার আর পাঠকদের এই মেলবন্ধন, এই ভালোবাসার বাঁধন তো মিথ‍্যে মিছে ভুলের ফসল নয়!

যখন কলম কামড়ে ভাবছি পাঠকদের কী বলবো, তখন হঠাৎ চোখ গেল পথের ধারে ফোটা এক ঝাঁক বাসন্তী রঙা এপ্রিল ফুলের দিকে। ডাফোডিলস্! বসন্তের ফুল। আশার ফুল। বন্ধনের ফুল। আর দেরী না করে এই তিন ফুলের গুচ্ছে বেঁধে নিলাম বং ঢং-এর সমস্ত পাঠকদের জন‍্য আমার প্রীতি শুভেচ্ছার তোড়া।

আবার দেখুন মজা! প্রথমে ‘এপ্রিলের ফুল’ দেখে আপনারা ভাবলেন আমি হয়তো বোকা বানাচ্ছি আপনাদের। কিন্তু আসলে আমি জানাচ্ছি বং ঢং ডট কমের জন্মদিনের শুভবার্তা। ভাগ‍্যিস এমন রসিক দিনে জন্ম হয়েছিল বং ঢং-এর!

Facebook Comments


এই রকম নতুন গল্পের খবর ই-মেলে পেতে সাইন-আপ করুন এখনই!

Leave a Comment: