Download this post in PDF format if your browser doesn’t display Bangla script properly.
(পূর্বানুক্রমে)
গির্জ্জের ঘড়িতে ঢং ঢং করে সন্ধ্যে সাতটা বাজলো। টুলো হুড়মুড় করে বেরিয়ে এলো বাবু যজমানের দেউড়ি থেকে। দেয়ালগিরিগুলো সদ্য সদ্য জ্বালানো হয়েছে। পথ আলোকিত। লোকে লোকারণ্য চারিদিক। আটচালে আটচালে মা বসে গেছেন। বিভিন্ন বাবুদের বাড়ির চণ্ডীমণ্ডপে ঢাকের বাদ্যি, ধুনোর গন্ধ।
“আজ কপালের খ্যাংড়া আটকায় কে? যা জাঁহাবাজ মাগী!” ভাবতে ভাবতে পণ্ডিত দেখেন তালুই-এর দোকানে উপছে পড়েছে ভিড়। ছোঁড়াদের গায়ে মাথায় মোচ্ছবের রং লেগেছে। অ্যালবার্ট টেরি কেটে, ধুতি চাদরের ওপরে চীনে কোট ঝুলিয়ে, পানের রস গালের কষ রাক্ষুসীরানীর মতন লাল দেগে সব লক্কা পায়রার মতন বকুম বকুম করে ফিরছে।
যজমানের বাড়িতে আজ খোসামুদি নাটক খেলতে খেলতেই বেলা গড়িয়ে গেল। তবে হ্যাঁ, গিন্নীর ফাঁদা নথের ব্যবস্থাটা হয়ে যাওয়াতে মনটা এক্কেরে তুলো তুলো হয়ে গেছে। যজমান এবার দাতাকন্ন সেজেছেন ‘লাতি’ আসার আনন্দে। মেয়ে-জামাই, ভাগ্নার তো বটেই, সরকার, গোমস্তা, নায়েব, দেওয়ান, ফরাস, ভাণ্ডারী, কারকুন, চোপদার, দারোয়ান, দাস-দাসী, পাচক ঠাকুর — কেউ বাদ যাবে নে। সব্বাই পাবে উত্তম বস্ত্র। ব্রাহ্মণরা বেনারসী জোড়। ভেতরের খপর, বাবু পেরায় ২২/২৩ হাজার ট্যাকার বস্ত্র ক্রয় করেছেন। তা বাদে আছে গিন্নী আর ভেতরবাড়ির বৌ-ঝিউড়িদের গহনা, শাঁকা সিঁদূর। নবমীর রেতের বেলায় হাফ আখড়াই, শামবাজার চক থেকে আসে দোহারদের দল। বাবুর যতো উমেদার, মোসাএব এমনকি পুজুরি বামুনও দাদাঠাকুর হয়ে বসে সেই হাফ আখড়াই-এর দলে। গানের চাপান উতোরে জিতে গেলে বাবু তাদের কোঁচড় দেবে ভরিয়ে। “তা এগুনো এট্টু চিন্তাভাবনা করতি হয়। কোন দলের পোঁ ধরলি তকমা বাগান মায় জুরীগাড়ি জোটে তা বলতে পারে কে? মাগী এগুনু কি বুঝবে! কেবল মুখ ঝমটানি – ‘সহর উদ্ধার করে এলো’। হুঃ, মেয়েছেলে একেই বলে।”
মেয়েছেলের কথায় টুলোর মনে পড়ে, তার বুকের খোঁদলে যত্নে মুড়ে থাকা একটা মুখ। পদ্মপাতার মতো মুখখানি সুডৌল, সুর্মাটানা চেরা চোখে মদির আহ্বান, কমলারঙা ঠোঁট। রুনু ঝুনু ঝুনু ঝুনু হেঁটে সে যখন সভাঘরে ঢোকে, বাবুর মজলিসে আপসেই হাজার হ্যাজাক জ্বলে ওঠে। বাবুর খাস পেয়ারের খাসা মাল সেই কোন মুল্লুক অ্যালাবাদের মীরগঞ্জের টুকলিবাঈ। বাবুর বারাসতের বাগানবাড়ির হুরী পরি। সব্বার কপালে তার দর্শন জোটে নাকো। বাবুর কড়া পাহারা। খাস মোসাএব আর খাস ইয়ারদের অনুমতি থাকে টুকলিবাঈ-এর অনুপম দেহবল্লরীর হিল্লোল তুলে বাঈ নাচ দেখার। মাঝে মধ্যে দিলখুস্ থাকলে টুলোর আবেদনও মঞ্জুর করেন বাবু। তাই বচ্ছরভর দশমীর অপেক্ষায় থাকে টুলো।
দুটো দুটো নীলকণ্ঠ পাখি উড়িয়ে, কোলাকুলি মিষ্টিমুখ সেরে মোসাএব পরিবৃত হয়ে বাবু চলেন আসল মিষ্টিমুখ সারতে। পেছনে চলে টুকলির পেঁচোয় পাওয়া টুলো।
“চার আনা! চার আনা! লালদিঘী, আলুপোস্তা, তিরজরী! এসো গো বাবু!” গলা ফাঠিয়ে চীৎকার করে খদ্দের ডাকছে জুড়িগাড়ীর সঈস্গুলো। হালকা হাওয়াষ থিরথিরিয়ে কাঁপছে কোচোয়ানের দু পাশে জ্বালা টেমিবাতি। ঘোড়াগুলো থেকে থেকে খপ্ খপ্ পা দাপাচ্ছে আর লেজ ঘুরিয়ে মশা তাড়াচ্ছে। টুলোর হাজার তাড়া থাক, ঐ এক্কাতে তার পবিত্র পশ্চাদ্দেশটি ঠেকাবে না। সাত ভূতের পাছা পেতে বসা আসনে বসবে ত্রিসন্ধ্যা আহ্নিক করা টুলো পণ্ডিত? আহ্নিকের বেলা গড়িয়ে গেলো আজ মনে পড়াতে আরো বেগে পা চালায় টুলো। হঠাৎ কানে এলো —
“অ্যায় বামনে! ইদিক চা!
কোতা যাস্ ঠেঙ্গিয়ে পা?
গোরু খাই জানিস তা?
তুই খাবি তো লিয়ে যা!”
সাথে হো হো হো হাসির হর্রা। মস্ত রাগে অন্ধ হয়ে ইদিক উদিক তাকাতে টুলোর চোখে পড়লো গড়োয়ানদের কোচগাড়ির পেছন পাঁচিলে বসে আছে এক দঙ্গল ছোকড়া। এই হয়েচে এক আপদের বালাই। সেই বকাটে ফিরিঙ্গি মাস্টারটার যতো শিষ্য। হতচ্ছাড়াগুলো এক একটা বর্ণচোরা আম। বয়স্ক মুরুব্বি, বামুন পণ্ডিত কারো ধার ধারে না। মোছলমানদের ঘটিতে জল খায়। বামুন ভোজন করায় মদে-ভাতে। টুলো শুনেচে এদেরও হাতে মা জগজ্জননীকে অন্নজল খেতে হয়। কারণ হুজুগেগুলো নিজেদের ইয়ং বেঙ্গল হ্যানো তেনো বলে ডাকলেও পুজুটি করা চাই। হুঃ, টুলো কি বোঝে না, চাঁদা তুলে ঐ টাকায় মহানন্দে মৎস মাংস ভোজনের এমন মসৃণ উপায় আর কি হতে পারে! ম্যাগো, ব্যাটারা না কি মায়ের সামনে বিলিতি চর্বীর বাতি জ্বালায়, ঠাকুর দালানে জুতো মসমসিয়ে হাঁটে, মাকে সোনার মুকুটের বদলে লোহার বনাত পরায়। ভোগে স্যাণ্ডউইচ নামের কি সে বস্তু টুলোর বাপ দাদাও শোনেনি, তাই গেলায়। মাকে গঙ্গার জলে স্নান না করিয়ে কেতলীর গরম জলে স্নান দেয়। পরে ‘জল নষ্ট কোরো না হে’ বলে সেই জলে কর্মকর্তা চা বানিয়ে খায়!
কাজেই টুলো রাস্তার গু এড়াবার মতো এদের দেখে শিউরে উঠে পথ বদলায়। পৈতে চেপে ধরে গায়ত্রী আওড়ায়। ছোকড়ারা তুমুল হেসে চেঁচাতে লাগলো, “আমরা গোরু খাই গো গোরু খাই/ মোসলমানের চানের জলে হুঁকা-টিকা খাই।” টুলোর বিড়ম্বনা বুঝে গড়োয়ানরা হাঁকে, “বাবু এসো গো!” টুলো পিত্তি চটা সুরে “যাঃ ভাগ্” বলাতে তারাও গলা মেলায় — “তবে ঝাঁকা মুটেয় চেপে যা। জুড়ি গাড়ি চেপে যাওয়া তোর কম্ম না।” মনটা তেতো লাগে টুলোর। বুকের খাঁচায় পোরা টুকলিবাঈ-এর সাথে টুকি টুকি খেলতে খেলতে বেশ পথ কাটছিল। এ কি গেরো!
“অলপ্পেয়ে মিনসে! খ্যাংড়া মারি তোর টিকির গোড়ায়! বলি আহ্নিক টাহ্নিক চুলোয় রেকে ঘুরে এলি কোন গোরস্থানে?” খ্যাঁক খ্যাঁক সুরে টুলো যেন পদ্মের পাপড়ির বুক থেকে খসে পড়ল এসে নর্দমার থুপসে পড়া কাঁঠালের পচা ভুতিতে। টুকলির টসকানি রূপের কথা ভাবতে ভাবতে দরমার দোর ঠেলে কখুন যে নিজের খোয়াড়ে ঢুকে পড়েচে!
এদিকে আমাদের ঘোষাল পো-ও বসে থাকার মালটি নয়। হাটখোলা, দত্তপুকুর, শোভাবাজার, জোঁড়াসাঁকোর যত বাবু আছেন সক্কলের অন্দরমহল পজ্জন্ত অবাধ যাতায়াত ঘোষালের। নাড়ি টিপে বাবু বেছে নিতে হয়। শহরের মজা লুটে খেতে পাড়া গাঁ গঞ্জ থেকে কতো বাবুই এলো গেলো, কিন্তুক জমিয়ে বাবুর মতো বসে বাবুয়ানি ফলাতে পারলো ক’জন! “ভারি এলো কলুটোলের বাবু আর ওর কুলপুরুত নচ্ছারের ব্যাটা নচ্ছার টুলো! ওদের সাতপুরুষের ঘটিবাটির চাঁটিমাটি না করিচি তো ঘোষাল পো নই মুই। বাবুর মতো বাবু বটেন একুন যার পোঁ ধরিচি, এই দঁ বাবু!”
এই সব কথা ভাবতে ভাবতে দাওয়ায় বসে হুঁকো টানছে ঘোষাল। আকাশটা মেঘমুক্ত টলটলে। চাঁদের আলো পড়েছে উঠোনের তুলসী মঞ্চে। এই নিয়ে পাঁচবার হল ঘোষালের বউ মরেচে। লোকে তাকে ভাগ্যবান বলে। এবারটির বয়েস নিতান্তই কচি। গরীবের গৌরীদান দায় উদ্ধার করে বর্তে গেছে ঘোষাল। টুলোর পিণ্ডি চটকে মিটিমিটি আলো জ্বলা শয়ানকক্ষের আধভেজা দোর ঠেলে ঢোকে ঘোষাল। পুরুষের দায় কি কম দায় গা? কন্যাদায় উদ্ধার, বংশরক্ষার দায় পালন! ঘোষাল দীর্ঘশ্বাস ফেলে হুঁকা রেকে দায়ভার চোকাতে উদ্যোগী হয়।
কলকেতার পথে ঘাটে এই কথা বাতাসে ওড়ে যে মা দুগ্গা দঁ বাড়ির গহনা পরে সাজতে সাক্ষাৎ হিমালয় থেকে নেবে আসেন। কুলপুরোহিত রক্তবস্ত্র পরে টিকিতে রক্তবর্ণ গাঁদাফুল গেঁথে শুদ্ধ মন্ত্রোচ্চারণ করতে করতে তন্ময় হয়ে মাকে সাজান। জয়পুরী মোতি বসানো পান্না-চুনী-হীরের কড়া, এই মোটা মোটা। বেনারসের গোলাপী পাথরের সাথে সোনার মিশেলে ফুলেল বালা। আন্কাট্ হীরে বসানো তাতে। বালা হস্তীমুখী। কড়া মকর। হীরের বাউটি, খাঁটি সোনার কঙ্গন, চুড়ি, তাগা। গোলাপকাট হীরে বসানো রুবি গাঁথা বাজুবন্ধ। জোড়া ময়ূর, পদ্ম বসানো মোট ন ছড়া মোতির সীতে হার, হীরে আর মোতি গাঁথা নাকফুল, গোলাপ আর ময়ূর ডিজাইনে হীরে, পান্না, চুনী গাঁথা চওড়া কোমরবন্ধ। সোনা-পান্না-মোতির ঝালর দেওয়া বর্ণফুল ঝুমকা। সোনার মাকড়ি। ন’টি সোনার বেড় বসানো মোতির ঝালর দেওয়া কোমরের সোনার চন্দ্রহার, সোনার হাতফুল, মায়ের পায়ের সোনা মোতির মোটা ঝালর দেওয়া পৈঁজর।
দঁ বাবুর ভরভরন্ত সংসার। গদী, আড়ত, কোম্পানীর কাগজ, কাঠ-চুনের গোলা, নগদ দশ বারো লাখ টাকা দাদনে খাটে। বাড়িভরা পোষ্য, দান-ধ্যান, বাঁধা রাঁড়, এক পাল মোসাএব, গড়পাড়ে বাগানবাড়ি। দঁ বাড়ির অন্দরমহলের আনাচ কানাচ পেত্যহ ধোওয়া পোছা হয় গোলাপজলে। ঘড়া ঘড়া আতর আসে খোদ লক্ষ্মৌ থেকে। সেরা তাম্বুল আসে গয়া থেকে। রূপোর তবক মোড়া পান, সোনারূপোর বোলবোলায় সেই তামাকের টান, কিছুই খুশী করতে পারেনা দঁকে। সব থেকেও কি যেন নেই। কোথায় যেনো হার!
খোদ বেনারসের পুতুলপাড়ার সেরা পুতুল পুষছেন গড়পাড়ে। খোদ বাংলারও আছে। যখন যেটায় রুচি! তাদের আধো আধো বোল, নেকুপুষু চাল, গলে গলে ঢলানি, কিছুই আর মন ভরায় না। “যবে থেকে কানাই দত্ত কানে ঢেলেছে বিষ/ কেবল অহর্নিশ, একমাত্র চিন্তা দঁ-এর/ হাত পা নিশপিশ / হা টুকলিবাঈ হো টুকলিবাঈ, বাবুর হাপিত্যিশ।”
বাঁদরের গলায় মুক্তামালা হয়ে ঝুলচে টুকলি, ভাবতেই বুক কনকন করে দঁ-এর। রাগে গা জ্বলে যায়। ছ্যা ছ্যা ছ্যা। কলুটোলার বাবু! বলি, বাবুত্বের কি আচে ঐ চামচিকেটার? কেমন করে টুকলিকে হস্তগত করা যায় ভেবে ভেবে বাবু রূপোর পিকদান পান চুমরে চুমরে ফেলে ভরিয়ে দিলেন। চুনী বসানো রূপোর লাঠির হাতীর দাঁতের মাথাটায় আঙুলের টরে টক্কা বাজিয়ে বাজিয়ে রাত ঘন করে ফেললেন। “কোতাও না কোতাও তো ফুটো থাকতিই হবে।” যে ফুটো দিয়ে হড়হড় করে তিনি ঢুকিয়ে দিতে পারবেন বিড়ম্বনার বেনো জল। সেই জলে নাকানি চোবানি খেয়ে বাপ্ বাপ্ বলে টুকলিরানীকে তাঁর কোলে স্বয়ং এসে বসিয়ে দেবে ঐ কলুটোলার পো। “হুম্। একমাত্তর ঘোষালই পারে বটে, এই অসৈরণের হাত থে টুকলিবাঈকে বাঁচাতে।” সমস্যার সমাধান শেষে দু পাত্তর বিলিতি মেরে বাবু আজ গেলেন অন্দরমহলে। গেলেন প্রায় মাসাধিকাল পরে। টুকলির দুঃখে পতির প্রাণপাখি কাতর হওয়ায় তাঁর এয়ো স্ত্রীর আজ রাতের অভিসার ধন্য হলো।
শুভ কাজে দেরী নয় ভেবে সকাল হতেই কর্তা স্বয়ং ষোল উড়ে বেহারার পালকি হাঁকালেন ঘোষালের বাসায়। খুব গোপনে সারতে হবে কাজ। ঘোড়ার গাড়ির খপখাপি আর দারোয়ানের ‘হুঁশিয়ার হো..ও…’ ডাকে সব মাটি হবে। এই ভালো, কাকপক্ষী টের না পায়। পালকির বন্ধ দ্বারে তো মাগী লোকেও যায়!
দঁ বাবুকে দেখে ঘোষালের তো হাত পাগুলো গেলো উল্টে। ভাবটা যেন কেউ তার ঘাড়ে দশ ভরি মনিমানিক্যের ঝোলা চাপিয়েচে। কোথা থোবে, কোথা তুলবে ভেবে ভেবে একসা। শেষে বাবুর এক দাবড়ানিতে হুঁশে ফেরে ঘোষাল। “এই দূর্গা পূজায় যদি আমার কোলে পাকা নৈবেদ্দ হয়ে টুকলি টুক্ করে এসে পড়ে তো তোমার ঐ তিলক চন্দন সোনার পাটায়, বেটো পণ্ডিত। আর তা যদি না হয়, তো তোমার ঐ টিকির গোছা আমি টুক্ করে কেটে দোবো আহিড়ীটোলের চৌমাথে, দিন দাহাড়ে, লোকের ভিড়ে।”
বলা কওয়া সেরে বাবু বিদায় নিলে ঘোষালের পো তার নোয়াপাতি ভুঁড়িতে সরিষার তেল মাখতে বসলো দাওয়ার তেল পিঁড়ি পেতে। নাভির গর্তে তেল বীজকুড়ি কাটতে লাগলো, তবু তার তেল ঢালা শেষ হল না। যেন মাথা নয়, যতো বদ বুদ্ধির কারখানা তার ঐ বেলাকৃতি ভুঁড়ির কন্দরটি।
ঘোষাল জায়া অনেকক্ষণ স্বামীর কীর্তি সইলেন কোলের ছেলেকে মাই দিতে দিতে আর পাটকাটি দিয়ে ‘যাঃ যাঃ হুউস্…’ করে উঠোনের রোদে বিছোনো মাশকলাই, হরিতকী কাকেদের উৎপাত থেকে বাঁচাতে। তাঁর আকৃতি ক্ষুদ্র, বয়েস নামমাত্র কিন্তু সাংসারিক জ্ঞান কিছু হয়েছে। চিন্তিত স্বামীকে চিন্তামুক্ত করতে তিনি এবার হাল ধরলেন বিষয়ের।
সব শুনে কিরে কাটলেন যে গঙ্গা নাওয়ার সময় রোজই ঘোষ জা, বোস জা কি ভট্চাজ মজুমদার গিন্নীরা যখুন কলুটোলার ন’বৌকে “ওলো, ওদের ন’বউটা এখুনো নাকি বাপের ঘরে”, কি “পেত্যয় যাই মা, মেয়েমানুষের গুমোর যেন কোমর ভাঙা কুমোর”, অথবা “কি বজ্জাত মাগী” বলে উস্কানি, নিন্দেমন্দ দেবে, তখুন নিজের ঠোঁট দুটি টিপে ধরে শুধু অন্দরমহলের সার কতাটি বার করে নেবে।
কলুটোলার বাবুদের রাগুনী ন’বৌ-এর কাহিনী তো এখন পাড়ার মাগী-বৌদের সবচেয়ে রসালো গল্প। উঃ সে এক কাণ্ড বটে!
(ক্রমশঃ)