রঙ্গে ভরা বঙ্গদেশ : টুলো পুরুতের বঁড়শি

সূধী পাঠক, এই সপ্তাহ থেকে শুরু হল বং ঢং ডট্ কমের বিশেষ পরিক্রমা পূজা স্পেশাল। এক মাস ব‍্যাপী এই রচনায় নানা পর্বে থাকবে নানা স্বাদের ঘটনায় মোড়া বাঙালীর দূর্গাপূজা। সেই কোন পুরনো দিনের কোলকাতায় আটচালায় পূজা। সেই ঝিলের পদ্ম, বাবুদের গিনি নাগরা জুতোর মসমসানি, দারোয়ানের কোমরে বাঁধা লাল গামছা, মাথায় পাগড়ি, গালপাট্টা, রাস্তায় জ্বলতো গ‍্যাসের বাতি। সেদিনের পূজার রঙ্গতামাশার পথ বেয়ে কোলকাতার পূজা পরিক্রমা সেরে আমরা এসে পড়ব সাত সমুদ্র তের নদীর পারে বিদেশের ভূমে।

একমাস ব‍্যাপী এই হাসি আনন্দের যাত্রা পথে আমাদের সঙ্গে থাকুন। আপনাদের লাইক ও কমেণ্টে উৎসাহিত করুন। শারদীয়ার শিউলি শুভেচ্ছা আমাদের সকল পাঠকবৃন্দকে।

টুলো পুরুতের বঁড়শি

Download this story in PDF format if your browser doesn’t display Bangla script properly.

টুলো পূজুরি ভট্চাজ বামুন ঠাকুর কাপড় বগলে নাইতে চলেছেন। আজ তাঁর বড় তাড়া। সকাল সকাল যেতে হবে যজমানের বাড়ি। সূর্য‍্য সবে উঁকি মারছে। রাস্তায় জ্বলা দেয়ালগিরির আলো নিভু নিভু। জোর কদমে হেঁটে চলেছে মর্নিং ওয়াকের ইংলিশম‍্যান, ডাক হরকরা। গঙ্গাঁস্নানে চলেছে বুড়ো আধবুড়োর দল। পালকির উড়ে বেয়ারারা দাঁতন করতে করতে দৌড়ে যাচ্ছে গঙ্গাঁয়। নেয়ে ধুয়ে শুরু করবে দিনের কাজ।

টুলো পণ্ডিতের মনে অশান্তি। সে দিনকাল আর নেইকো। দুগ্গাপূজা ক্রমাগত তার আভিজাত‍্য খোওয়াতে বসেছে। কোত্থেকে ভুঁইফোড় হয়েছে বারোওয়ারির দল। ছেঃ ছেঃ! অমন সোনার পিতিমে মা গৌরীকে হাটে এনে ফেলেচে সিংহদূয়ার থেকে যেনো! তেলী কলুতেও আজকাল মাকে ভোগ খাওয়াচ্ছে! ঘোর কলি! ঘোর কলি! এমতাবস্থায় গিন্নী ধরেছেন কমসে কম দশ হাত পাছাপেড়ে শাড়ি আর ফাঁদা নথের বায়না। টুলোর রাতের ঘুম চলে গেছে গিন্নীর মনোবাঞ্ছনা পূর্ণ না হলে কপালে খ‍্যাংড়া মারের দুশ্চিন্তায়। যে জাঁহাবাজ মাগী নিয়ে সংসার! অন‍্যে কি বুঝবে!

যাই হোক, সক্কাল সক্কাল পেড়ে ফেলতে হবে যজমানকে। বেলা যত বাড়বে, বাড়বে উমেদার, মোসায়েবের ধান্ধাবাজি। “এট্টু নিভৃতে কথা কওয়া যাবেনে,” এই ভেবে গঙ্গাঁয় ডুবকি দিয়ে ঘাটে উঠে পড়লে পণ্ডিত। উঠতেই আরে রামোঃ, ছ‍্যা ছ‍্যা, কার মুখ দেখতে হল! ওই বজ্জাতটার জন‍্যই তো তার এই হাল! গুরুদাস ঘোষাল! আর বচ্ছর বাবু যজমানের বৈঠকখানায় কি কেলোর কীর্তি। ঘোষাল তার যজমানের কানে বিষ মন্তর ঢেলেছিল যে টুলো না কি পিরিলির বিধবা বিবাহ সভায় পণ্ডিত বিদেয় নিয়েছে। অহো, টুলো যেন বোঝেনা সেই বচ্ছর যজমানের ঘরে নতুন এয়েচে শিশু ‘লাতি’। মোটা টাকার খেস্ খসাবার ধান্ধায় টুলোর অপকীর্তি ছড়ানো! আনলে এক্কেরে বামনীকে ধরে সভা মাঝে। সে বেটীও গুরুমারা বিদ‍্যেয় কম পটিয়সী নয়। একগলা ঘোমটায়, হাত পা দাপিয়ে, খ‍্যানখেনে গলায় বাপ পিতেমের চোদ্দগুষ্টির নামে কিরে কেটে বললে তার সোয়ামী বলে তখন শয‍্যাগত, প্রাণপাখী এসপার কি ওসপার আর তিনি কিনা গেছেন তখন পিরিলিবাড়ির ভোজে? এই বলে সে ঘোষালের প্রায় গোঁফ ধরে ঝুলে পড়লে, “মা, মা! গু খেকো অলপ্পেসে মিনসে! ঘাটের মড়া! আমার অমন বিদ‍্যেধর পুণ‍্যবান সোয়ামীর বুকে তোর ওই হুমদা পায়ের নাতি মারা?”

কাছারিবাড়িতে হুলুস্থুলু পড়ে গেল। ঘোষালও কম যায় না। সে সাক্ষী মানলো তার জামাই, ভাগনা, নাত জামাই, দোত্তুর আর খুড়তুতো ভায়েদের নাম করে।

“বটে? তারা সব তবে ছেলো ওকেনে?” বাবুর জব্বর জিজ্ঞাসায় ঘোষাল একেবারে ফেটে পড়ে টুলোকে বাপ-বাপান্ত, টুলো বৌকে রক্ত তুলে মরা গাল-গালান্ত, শাপ-শাপান্ত করে নিজের পৈতে ছিঁড়ে, নিজেই নিজের গালে চড় মারতে মারতে বেরিয়ে গেল। সিংদূয়ার থেকে গালপাট্টা পরা দুই দেউড়ি দারোয়ান আগুপাছু কিছু না বুঝেই তাকে দিলে ঠেলে বের করে। সেও “অন‍্যায‍্য তা, ঘোর অন‍্যায়, অভিশাপ অভিশাপ!” করতে করতে টিকি দুলিয়ে চলে গেলে।

সেই থেকে আর ঘোষাল-ভট্চাজে রক্ষে নেই। বাইরে দেখা হলেই নারদ! নারদ! আর ঘরে গলায় বেড় দিয়েছেন গিন্নী। পান থেকে চুন খসলেই বলে, “হাটে ঘড়া ভেঙে দোবো মিনসে, এবার ফাঁদা নত যদি না দিয়েচিস্।”

কিন্তু আজ এসবে সময় ব‍্যয় করার সাধ‍্য নেই। উভয় পক্ষই নদীর ঘাটে “চুলোয় যা” বলে ক্ষান্ত দিলেন আজ। নাকে মুখে দুটি গুঁজে পথে পণ্ডিত যখন বের হলেন, দিনমণি বেশ ডাগর হয়েছেন। এতদিনের বাসি শুকনো শহরটায় বেশ সাজো সাজো রব।

কুমারটুলি, সিদ্ধেশ্বরীতলা ইতিমধ‍্যে সরগরম কারিগরদের ত্রিপল চাটাইয়ে। পথের উপর ঢিবি করেছে রং করা পাটের চুল, কুরচী ফুলের মালা, টীন পেতলের ঢাল তলোয়ার, বর্শা ত্রিশূল। রং ছোবানো নানা জাতের কাপড় ঝুলছে তাদের বাঁশের ছাউনি বেড়ায়। দর্জ্জিরা পাড়া পথে হেঁকে যাচ্ছে, “বানাবে নতুন টুপি, চাপকান!” কেউ বা “মধু নেবে গো”, “শাঁকা…” বলে দরোজা দরোজায় মারছে হাঁক। বাবুদের বাড়ি বাড়ি ঘুরে জুতোর শুকতলা খুইয়ে ফেলছে যাত্রা পার্টির দালাল, আতরওয়ালা আর শান্তিপুর-ঢাকাইএর মহাজনেরা।

“ধুত্তোর! মেলার হাট বসেচে যেনো পথে!” টুলো বেজায় জোরে পা চালাতে গিয়ে কারো না কারো সাথে ঠোক্কর খেয়ে বললেন মহা বিরক্তিতে। এবছর নাতির জন্মবার পড়েচে সাক্ষাত মায়ের অষ্টুমীর তিথিতে। বাবু যে এবার হাতে পায়ে দাতাকর্ণটি হবেন তাতে কোন সন্দেহ আচে কি? শুধু বঁড়শিটা সঠিকভাবে গেলানো, ব‍্যস! গিন্নীর ফাঁদা নথের ছেঁদো বায়না তো বটেই, তাঁর সমবচ্ছরের দুধটি, মাখনটি, গয়ার সেরা তামাকটির, এমন কি চাঁদপাল ঘাটে জাহাজঘাটার বোতলের সেরা বিদেশী মালটির কোন অভাব থাকবে নাকো।

বড় রাস্তার গোলমাল পেরিয়ে সাঁকোয় পা রাখবেন হঠাৎ পেছুন ডাক — “অ পণ্ডিতমশাই!” দেখেন বেণেদের মশলা চৌপট্টির হলুদগুঁড়া, লঙ্কাগুঁড়ার আলপনা মাখা সিঁড়ির ’পরে বসে হুঁকা খাচ্ছেন শিবপ্রসাদ তালুই। পাশেই ওনার শান্তিপুরী ধুতিশাড়ির দোকান। পাশে রাখা সিন্দুরচুপড়ি, মোমবাতি, পিঁড়ি-কুশাসন-কম্বল। অবসর দিচ্ছেন হুঁকায় এখন। তা ব‍্যাটা তোর মতন আমার তো আর ভুঁড়ি পেতে বসে খাবার জো নেই। দিলে পেচু ডেকে! “কি? বলেন?”

“তাড়া কি? এট্টু সেবা করে যান!” হুঁকোটা এগিয়ে ধরেন।

হেসে নামাবলীটা মাথায় পেঁচিয়ে নেন পণ্ডিত। “না হে, তালুই মশাই! তাড়া এখন। না হয় ফিরতি পথে।”

“ময়মনসিংহ থেকে নতুন মাল এয়েচে। পাছাপেড়ে।” হুঁকোর গলগলে ধোঁয়ায় পেঁচিয়ে যায় তালুইএর কথা। মাথার পেছনে হাত নেড়ে “হবেখ’ন হবেখ’ন” করতে করতে টুলো ততক্ষণে মজাখালের মাঝে।

যজমানের বাড়ি গমগমে। পূজোর দিন ঘনিয়ে আসছে। বিদেশ বিভুঁই থেকে আত্মীয় স্বজন এলো বলে ছানাপোনা সুদ্ধু করি। এরই মাঝে নিত‍্যি নিত‍্যি অশান্তি। চুরি ছেনতাই বাড়ছে। আজ ওই মাগীর নাকের নথ টেনে পালালো তো কাল কোন বাবুর বাড়ির “মারি তো গণ্ডার লুটি তো ভাণ্ডার” করলো। টহলদারগুলো সব এক একটা হয়েছে অকম্মার ধাড়ি। পৈতেটাকে বুকে পেটে দু হাতে টানতে টানতে বাবু ভাগ্নাগুষ্টিকে নেমন্তন্নের লিস্টি বানাতে দিয়ে থেবড়ে বসলেন গিয়ে দালানে পাতা জাজিমে। এদিকে উঠোনের কোণে শাড়ি আর গয়নার পুঁটুলী নিয়ে মহাজন মুখের ঘাম মুছে হাওয়া খাচ্ছেন গামছা ঘুরিয়ে। অন্দর মহল থেকে ডাক আসলেই যাবেন। এসে নিয়ে যাবে ক্ষীরোদ ঝি। মহাজন বুড়া। সে অন্দরমহলে গেলে ক্ষেতি কি!

হন্তদন্ত টুলোকে দেখে বাবু বলে উঠলেন, “বেলা গড়িয়ে দিলেন? বলি, আমার সময়ের কোন খপর আচে কি আপনার?”

হাত কচলা দিয়ে টুলো পাঁজি পেতে বসেছেন, বাজার সরকারের ব‍্যাগড়া — “বাবু, পাঁটার লোক এয়েচে।”

“জামাইদের বলো। সুলক্ষণ দেকে শুনে নিক। বলির পাঁটা বলে কতা। ঢুলীরা এয়েচে কি?”

“তারা নারকোল দে মুড়ি সাবড়ে তাস খেলতেছে পুকুর পাড়ে।”

“আহা, এই তো পণ্ডিতমশাই এয়েচেন। সানাইদল আর ঢুলীদের পাটিয়ে দাও। কখুন কি রাগরাগিনী বাজাবে ঠিক করে নিক।”

বৃন্দে ঝি খুরিভরা লুচি মণ্ডা নাবিয়ে দিয়ে গেল টুলোর সামনে। টুলো ঝোপ বুঝে কোপ বসালেন বাবুর মাথায়। “বাবু, ছাতুবাবু আর লাটুবাবুর আস্পর্দা দেকলে কলজে ফেটে যায়। ব‍্যাটারা দশ টাকার নোটে তামাক পুরে ফুঁকলে কি হয়, দুগ্গাপূজার উপকরণে আপনার ধার দে কাচে যায় না, তা বলে দিলাম। আমার কাচে খপর আচে এবার আপনি লাট সাএবের নেক নজরে আচেন হুজুর। আপনার গেলোবারের মোচ্ছবে লাটবাবু এক্কেরে লাট খেয়ে গেচিলেন। এ বচ্ছর আপনি যদি গঙ্গাঁয় সর্ব পেত্থম কলা বৌ সিনানের পাট্টা না পান তো কি বলিচি!”

বাবু ততক্ষণে সোনার আলবোলায় অম্বুরী তামাকের সুবাস শরতের বাতাসে ভরে মহানন্দে দুলে দুলে উপভোগ করছেন তাঁর মোসাএব তাঁবেদারদের টুলোকে সমর্থনের টুকরো কথা। ডান হাতের আঙুলে হীরে চমকাচ্ছে সূর্য‍্যের সোনা আলোয়। বাঁ হাতে টলটলে মোতী-পোখরাজ।

“বল্লাল!” বিরাশি শিক্কার এক হাঁকে চমকে উঠলো টুলো সহ আশেপাশের যতো ফুলবাবুরা। যারা মিহি সুতোর ধুতি আর গিলে পাঞ্জাবীতে ওই সাতসকালে আতরে নেয়ে, পান জর্দায় মুখ রেঙে, মেহগনী কাঠের ছড়ি হাতে শহরের আর আর বাবুদের হাল হকিকত, পূজোয় তাদের মুরুব্বীয়ানা ফলাবার গোপন তথ‍্য, কার কতো আশিয়ানার ক্ষমতা তা নিয়ে আলাপ প্রলাপ করতে বাবুর চারধারে ভোমরা হয়ে ঘুরছিল।

“জি হুজুর” বলে যে লেঠেল সর্দার গোঁফ চুমরে ভাঁটার মতো লাল চোখ ঘুরিয়ে সামনে এসে দাঁড়ালো, তাকে বাবু হুকুম দিলো, “চাঁদপালে ম‍্যানচেস্টার থেকে বড় স্টীমার ঘাটে এয়েচে। তুই লক্ষ্মণ আর ঘনারামকে নিয়ে যা। গন্ধ তেল, সাদা রুমাল, সিল্কের ছটাক রিবন আর খাসা বিলাইতি বোতল — অর্ডার দেওয়া আচে। যা। আর, এই যে মহাজন!”

“আইজ্ঞা?” সে উঠে দাঁড়ালো উঠোন কোণে।

“বাড়ির অন্দর মহলে এবারকার সবচেয়ে চালু ডিজাইনের জড়োয়া গয়না দেবে। শাড়ি মলমলে, ভরা জরিপাড়, ওড়না বালুচরী হওয়া চাই। পায়ের মল, কোমরবিছে, ফাঁদা নথ — ভারি ভরি হওয়া চাই। যাও গিয়ে।”

মোসাএবদের নিজের এলেম দেখিয়ে বাবু আবার আলবোলায় ফিরলেন। জানেন মোসাএবরা নানা ফুলের ভ্রমর। এখানকার হাঁড়ির খবর শহরের অন‍্য বাবুদের বুকে জ্বালা ধরাবে নিমেষে।

তাই শেষ কিস্তি মারতে টুলোর পাতা ফাঁদে পা দিলেন বাবু। টুলো অষ্টমীতে বাবুর “লাতির” বিশেষ মঙ্গঁলার্চনায় মাকে বিবিধ উপচারে পূজার নির্বন্ধ পাকা করিয়ে নিলেন। দোওয়া হবে জড়োয়া গহনা, ফাঁদা নথ। বেনারসী শাড়ি, তসরের ধুতি-চাদর, সোনার কলস, সুগন্ধী মিঠা পান, জর্দা, তামাক, তা বাদে ন’থালার নৈবেদ্দ। প্রণামী। স্বর্ণমোহর।

ভোর ইস্তক হাঁকাহাঁকি, মনের লড়াইতে টুলো কাহিল হয়ে পড়েছিলেন। এখন বঁড়শিতে বড় মাছ গেঁথে তুলে তাঁর ইচ্ছে হতে লাগলো ওই চণ্ডীমণ্ডপেই ধুতি তুলে “তা থৈয়া” করে, কিন্তু বাবুর মনোরঞ্জনে বাধা পড়লে গাছপাকা ফল কোলের চুপড়িতে নাও পড়তে পারে ভেবে বড় লাজুক হেসে টুলো বললে, “প্রভু জানেন যজমান! আপনার মতো দাতার পূজায় তিনি কি পরিমাণ মজে আছেন আপনার বাৎসল‍্য রসে। আমি সামান‍্য দীন। একটা আস্পদ্দা করে ফেলিচি হুজুর। আপনার গুণকীর্তন ভেবে ভেবে নিজেকে সামলাতে না পেরে লিখি ফেলিচি আপনার মহিমা কীর্তন। যদি আজ্ঞা করেন…”

মোসাএবদের সামনে নিজের গুণকীর্তণ শোনার লোভ ছাড়ে কোন মূর্খে? অতএব পণ্ডিত শুরু করলেন বাবু গুণকীর্তণ পালার চাপান উতোর।

এদিকে মালীরা এসে গেছে পদ্মফুল, বেলপাতা, চাঁদমালা, কুঁচোফুল নিয়ে। ঢেঁকি ছাঁটা চাল, মশলা এনে হাজির চাষি বাড়ির বৌ অতএব পুরুতমশাইকে ‘বাবু আখ‍্যান’-এর পাতা বন্ধ করে মালীদের নিয়ে পড়তে হল। আর অন্দরে খবর গেল। চিঁড়ে কোটা, চাল কোটা নিয়ে যেতে এল ঝি-এর দল।

এল কাড়া নাকাড়া ঢোলকিয়ারা। ষষ্ঠীতে কলা বৌ গঙ্গাঁ সিনানে যাবে। আগে আগে যাবে এরা। সানাইবাদক। কলা বৌ কোলে পুরুত। পুঁথি হাতে তন্ত্রধারক, বাড়ির আচার্য‍্যি বামুন ঠাকুর, গুরু। তার পশ্চাতে লাল মলমলে ধুতি পরে বাবু। মাথায় রূপোর ছাতা ধরে স্বয়ং বল্লাল। আশেপাশে ভাগ্নে ভাইপো জামাই। মোসাএব। তারপর ফুল বেলপাতা, কুশাসন ঘণ্টা শাঁখ হাতে মালীরা।

ষষ্ঠীর ভোরে কোলকাতার পথে পথে শুরু হবে এমনই মোহময় বাবু মিছিল। মওকা বুঝে বাবুর সামনে একখানা সিল্কের পীতাম্বর ধুতি চাদরের বায়না ফেলেই দিলেন টুলো পণ্ডিত।

(ক্রমশঃ)

Facebook Comments


এই রকম নতুন গল্পের খবর ই-মেলে পেতে সাইন-আপ করুন এখনই!

Leave a Comment:

4 comments
Add Your Reply