প্রতিলিপির প্রতিযোগীতায় দেওয়া আমার ছোটবেলার স্মৃতিকথার গল্প “বামুনবাড়ি”। নীচে দিচ্ছি তার থেকে কিছু লাইন। আপনারা প্রতিলিপির ওয়েবসাইটে গল্পটা পড়ে কমেণ্ট দিন, জানান কেমন লাগলো। আরো অনেকের লেখা স্মৃতি-গল্প পড়তে পারবেন ওদের ওয়েবসাইটে।
বামুনবাড়ি
“হঠাৎ চোখ গেল বামুনবাড়ির পিছন দেওয়ালে। কি নধর কচিপাতার ঠাসবুনটে এক অশ্বত্থের চারা! কচিপাতার মুখে আবার এক বিন্দু জল। ঠিক যেন টুনির মনের সবুজ এক সুখস্মৃতির পাতা। কৃতজ্ঞতার আঁখিবিন্দুতে ভরা। বাড়ির দিকে ফিরে চলে সে। প্রকৃতিও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে টুনির থেকে এতগুলো বছরের ব্যবধানে। সেই মহাবৃক্ষ নীম আর নেই। কাটা পড়েছে আমগাছটাও। কুলতলির মাঠে এখন ‘বৃন্দাবন কুঞ্জ’ আবাসন। টুনি যেদিকে তাকায় সেদিকেই শুধু ইঁট কংক্রিটের জঙ্গঁল। প্রকৃতি যখন তার ছেলেবেলার চারিপাশে পড়ে পাওয়া চোদ্দ আনার মতন পড়ে থাকত তখন কোনোদিন তাকে যত্নে কুড়িয়ে রাখার প্রয়োজন বোধ করেনি টুনি। ভেবেছে, সে তো ছিলই, থাকবেই। আজ বড় ব্যস্ত ব্যাকুল চোখে ছেলেবেলার সঙ্গীঁসাথীদের খুঁজে বেড়ায় টুনি। কেউ দেখা দেয়, কেউ দেয় না। কেউ হারিয়ে গেছে বয়েসের ভারে, কেউ মরেছে প্রোমোটারের লোভের কোপে।
বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে টুনি। ‘মা, বামুনবাড়ির কি অবস্থা! একেবারে ভেঙে পড়েছে, কোনো মেনটেনান্স নেই।’
‘হুঃ,’ নাক দিয়ে অদ্ভুত এক আওয়াজ করে মা। মানুষেরই মেনটেনান্স নেই, তো বাড়ির!’ একটা চাপা শ্বাস ফেলে টুনি। এতগুলো বছরে প্রয়োজনে টাকা পাঠানো ছাড়া মায়ের মনের কোন খোঁজই রাখা হয়নি। কখনো কি ভেবে দেখেছে কত বাধা বিপত্তির কাঁটা ঝোপের মাঝে সংসারটাকে কেয়াফুলের মত ফুটিয়ে রাখতে কত ত্যাগ, কত তিতিক্ষার ভেতর দিয়ে যেতে হয়েছে মাকে!”