মাদার টেরেজার ‘চক্রান্ত’

Download this blog in PDF format if your browser doesn’t display Bangla script properly.

যত বয়েস বেড়েছে, অভিজ্ঞ হয়েছি, ততই দেখেছি এই জগৎ এক আজব কারখানা। লোকবলে যার গলা উঁচু, বাহুতে দুর্নীতির বল, পকেটে পয়সার কাঁচা স্রোত, তারাই সমাজে তাদের শিক্ষাহীন মস্তিষ্কের কতগুলো উদ্ভট প্রলাপের জোরে লব্ধপ্রতিষ্ঠিত মিডিয়ার পেজেও প্রতিষ্ঠা পায়। নিকৃষ্ট বিতর্কের মঞ্চে আবির্ভূত হয়েও যে সেলিব্রিটির মর্যাদা পাওয়া যায়, তা হিন্দুত্ববাদী গোঁড়া রাজনৈতিকরা ভালোই জানেন এবং তাদের বলা কতগুলো পাগলের প্রলাপকে ছেপে এবং দেখিয়ে আমাদের নিউজ মিডিয়া প্রমাণ করে সৎ সাংবাদিকতার স্থান আজকের জগতে নিশ্চিহ্ন। জনসাধারণের মস্তিষ্কে বিভ্রান্তির সলতেগুলো যদি আর.এস.এস.এর মতন উগ্রবাদীরা সাজিয়ে দেয়, নিঃসন্দেহে দেশলাই-এর ভূমিকা নেয় বর্তমান মিডিয়াগুলো, তাতে আর সন্দেহ কি!

বি.জে.পি.র নেতারা এবং তাদের মার্গ দর্শক সংস্থার হর্তাকর্তারা যখন বলেছেন মাদার টেরেজার চক্রান্ত ছিল ভারতবর্ষকে খ্রীষ্টান দেশে পরিণত করা, তখন মাদারকে অপমান করা ছাড়াও সব থেকে চূড়ান্ত অপমান তারা করেছেন ভারত মাতাকে। ভারত এক সর্বধর্ম সমন্বিত ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র, যেখানে আদি অনন্ত কাল থেকে সকল ধর্মাবলম্বীরা সুখে শান্তিতে নিরাপদে আপন আপন ধর্ম পালন করে এসেছে।

বর্তমান বি.জে.পি. সরকার আইন করে নীতি আনার চেষ্টায় আছে যে ভারতের কোন হিন্দুকে কোনো লোভ বা ভয়ের আছিলায় ধর্মান্তরিত করা যাবে না। এই প্রসঙ্গেঁ উঠে এসেছে মাদার টেরেজার নাম। তিনি নাকি সেবার আছিলায় শত শত দরিদ্র সর্বহারা হিন্দুকে খ্রীষ্টান করেছেন এবং সর্বোপরি ভারতকে খ্রীষ্টান রাষ্ট্রে পরিণত করা ছিল তাঁর চক্রান্ত!

চক্রান্ত মানে কোনো কাজ লুকিয়ে করা। তর্কের খাতিরে ধরে নিই মাদার চক্রান্ত করেছিলেন হিন্দুদের ধর্মান্তরিত করবেন। তাই যদি হয়, কোলকাতাবাসী তথা ভারতবাসী কি এতই নির্বোধ যে মাদারের চক্রান্ত ধরে ফেলতে পারল না? কোন প্রতিবাদী মিটিং-মিছিল হল না, পরিচিত স্লোগানের গুলি বারুদ ছুটল না? আর হিন্দুত্বের সংরক্ষণের দায়িত্ব নিজ ঘাড়ে নেওয়া দলগুলি ও নেতারাই বা চুপ ছিল কেন?

পরিসংখ‍্যানগত কোনো প্রমাণ আছে কি যে মাদার ঠিক কত জন হিন্দুকে কোন কোন সময়ে কি ভাবে কনভার্ট করেছেন খ্রীষ্টান ধর্মে? বরং মাদারের সঙ্গেঁ ২৩ বছর ধরে কাজ করেছেন এমন এক হিন্দু ভদ্রলোককে একবার এই ধর্মান্তকরণ সম্বন্ধে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তিনি বলেন, ‘তেইশ বছরে আমি একটাও এই ধরণের ঘটনার মুখোমুখি হইনি। চিরকাল দেখেছি মাদারের সব ধর্ম, সব বর্ণ, সব জাতির মানুষের প্রতি ছিল অপরিসীম শ্রদ্ধা। তাঁর কাজ ছিল poorest of the poor মানুষদের নিয়ে। তিনি এদের ভেতরে ঈশ্বরকে অনুভব করে তাঁর সেবাধর্ম চালিয়েছেন কেবল একটি মাত্র শক্তি সম্বল করে এবং সেটা হল সর্ব জীবে অকুণ্ঠ অপার ভালোবাসা।’

‘আমি একবার তাঁকে জিজ্ঞাসাও করেছিলাম যে উনি ধর্মান্তকরণ করেন কি না। উত্তরে তিনি সপাটে বলেছিলেন, “হ‍্যাঁ, আমি ধর্মান্তকরণ করি। আমি তোমার অন্তরের ধর্মকে বদলে দিই, যাতে তুমি বাইরে আরো ভালো হিন্দু, ভালো মুসলমান অথবা একজন ভালো প্রোটেস্টাণ্ট বা ক‍্যাথোলিক হতে পারো। অথবা একজন ভালো পার্সি, কি বৌদ্ধ। তারপর ঈশ্বরের করুণা আলোকপ্রাপ্ত হয়ে তুমি তাঁর ইচ্ছানুযায়ী জীবন নির্বাহ করো।”’

বি.জে.পি. সরকার যে ধুয়ো তুলছে অ‍্যাণ্টিকনভারসনের, যে কাউকে জোর করে ধর্মান্তরিত করা যাবে না, এ আর নতুন কি? ভারতীয় সংবিধানে এই নীতি বহুপূর্ব থেকেই আছে। কিন্তু সাথে এটাও মনে রাখা দরকার যে ভারত একটি উদার ধর্মাবলম্বী দেশ। কারণ হিন্দু ধর্মের মূল বাতাবরণটাই হল ঔদার্য‍্য, ক্ষমা, ত‍্যাগ। হিন্দু ধর্ম আলাদা ভাবে সুসংবদ্ধ ধর্ম বলে কিছু নয়। হিন্দু ধর্ম একটা জীবন দর্শন, জীবনশৈলী। কিভাবে জীবন যাপিত হলে আমরাও যে অমৃতের পুত্র এই বোধলাভ হবে, এটাই সারা জীবনের শিক্ষা আমাদের। হিন্দু ধর্মে অহরহ পাপ-পাপ, পাপী-পাপী ভাব নেই। আমরাই ব্রহ্ম, আমরাই সত‍্য এবং ঈশ্বর আমাদের ভেতরেই, এই উদার দর্শনে প্রতিটি হিন্দু মন আলোকিত। হিন্দুধর্মের পুরোধা শ্রীরামকৃষ্ণ নিজে সর্বধর্ম আচরণ করে বুঝিয়েছিলেন সব ধর্ম পালনের মধ‍্য দিয়ে এক ঈশ্বরের চরণে পৌঁছনো যায়।

তাই, কেউ যদি স্ব-ইচ্ছায় ধর্ম পরিবর্তন করতে চায়, তো সে দায় তার নিজের। সে স্বাধীন ভারতের স্বাধীন নাগরিক। সরকার কেন ছড়ি ঘোরাবে তার ইচ্ছের উপর?

খুঁটে খাওয়া, দীন হীন মানুষগুলোর জীবন কিভাবে কাটে একটা একটা দিন পার করে, তার খোঁজ সরকার রাখে কি? সেবার মাধ‍্যমে মাদার এই গরীব মানুষগুলোকে খ্রীষ্টান করেছেন, এই যদি বি.জে.পি.র অভিযোগ, তাহলে তারা নিজেরা সেবাধর্ম নিয়ে নিজেদের জীবন কেন উৎসর্গ করছে না এই মানুষগুলোর জীবনে নূ‍্যনতম প্রয়োজনীয় খাদ‍্য বস্ত্র বাসস্থান চিকিৎসা দিতে যাতে এই মানুষগুলোর ধর্ম বদল করার প্রয়োজনই না থাকে ! দু এক দিন বড় জোর মাসখানেক সবকিছুই নতুন উৎসাহ আবেগে করা যায়। কিন্তু জীবন উৎসর্গ করে করার সাথে আবেগের করার প্রচুর পার্থক‍্য। আবার কিছু পাওয়ার পরিবর্তে সেবাদান, এটা আরো কদর্য‍্য।

বরং আমার মনে হয় ক‍্যাথোলিক খ্রীষ্টান হয়েও মাদার ছিলেন এক উৎকৃষ্ট হিন্দুত্ববোধে উজ্জ্বল মানুষ। কারণ তাঁর দৃষ্টিভঙ্গীঁ ছিল হিন্দুত্বের সেরা শক্তি উদারতায় পূর্ণ। অন্তরে ছিল ত‍্যাগ এবং বুকে ভালোবাসা। মাদার যাদের জন‍্য জীবনের শেষদিন পর্যন্ত‍্য উৎসর্গ করেছিলেন তারা রিক্ত, নিঃস্ব। বদলে মাদারকে কি দেওয়ার ক্ষমতা ছিল তাদের? শুধু ভালোবাসা ছাড়া?

‘মা’ শব্দটার মধ‍্যে কি যে এক আকাশভরা তারার আলো আর বিশ্বভরা প্রাণের সঞ্জীবনী লুকিয়ে আছে, তা জানতে আদিত‍্যনাথদের মতন লোককে আসতে হবে কোলকাতার মতিঝিলের বস্তিতে। ‘নির্মল হৃদয়’-এর অলিন্দে, ‘মিশনারিজ অব চ‍্যারিটি’র প্রধান দরজায়। তখন ওই আত্মসুখে সুখী, জটিল মনের নাম কা ওয়াস্তে যোগীরা দেখবে কত শত অন্ধ, খোঁড়া, পঙ্গুঁ, অঙ্গঁবিহীন ভিখিরির দল, বুকের পাঁজর বের হওয়া বুভুক্ষু শিশু, রাস্তায় ধর্ষিতা পাগলিনী, এড্স রোগী, যক্ষ্মা, কুষ্ঠ আক্রান্তকারী, সমাজের তথাকথিত সুস্থ ভদ্র সমাজে যারা ঘৃণিত, অস্বীকৃত, তারাই কেমন বুকভরা ‘মা’ ডাক ডেকে উঠে টলমলো পায়ে শেষ চেষ্টা করছে জীবনযুদ্ধে জয়ী হওয়ার। কেউ বা জন্তুর মত বেঁচে থাকার কষ্ট শেষে ভালোবাসার কোলে নিচ্ছে শেষ নিঃশ্বাস।

ভারত শুধু তাদের নিয়ে নয় যারা আদিত‍্যনাথের বা মোহন ভাগবতের বক্তৃতা গেলে। ভারত এই সর্বহারাদেরও। হদ্দ গরীবদেরও। ভারত কাঙাল পথ ভিখিরি, ধর্ষিতা পাগলিনী, পাঁজর বের করা ভাতের বদলে ফ‍্যান গেলা শিশুদের। কিন্তু সরকার আর রাজনৈতিক জনপ্রতিনিধিরা এই সর্বহারাদের জীবনের কোনো খোঁজ রাখে না। এদের পরোয়া কেন করা হবে, এদের কি ভোটাধিকার আছে? এদের জীবনপাত্র উছলিয়া মাধুরী কোন মূর্খে দান করে! সরকারের রাজকোষে অর্থ সঙ্কুলান।

অথচ এই অভাগাদের ভাঙিয়েই রাজনৈতিক নোংরা খেলায় মাততে দেশের নেতাদের বাধে না। দেশের সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করতে এদের দেখিয়ে বলা হয় কত কত গরীব হিন্দু, খ্রীষ্টান আর মুসলমান হয়ে গেল। ভারত না কি এমনি করে হিন্দু রাষ্ট্র আর থাকবে না। হিন্দুরা হবে সংখ‍্যালঘু। তখন বিভ্রান্ত নাগরিক অস্তিত্ব বাঁচাতে ভোট ব‍্যাঙ্কে নিজেদের সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিকে ভোট দেবে।

যাদের জীবন মরণের কোন দায় সরকার তথা আপামার ভারতীয়দের উপর নেই, যারা বেঁচে থাকার জন‍্য নু‍্যনতম রসদও জোগাড় করতে পারে না, তারা যদি ‘যীশু’ ডেকে দুবেলা দুমুঠো ভাত, পরণের মোটা কাপড়, ক্ষতে প্রলেপ আর শান্তির মৃত‍্যু পায়, তাতেও সরকারের ব‍্যাগড়া?

মাদার টেরেজা কোলকাতায় শিক্ষিকার দায়িত্ব নিয়ে এসেছিলেন। পরে অন্তরে গরীব দুঃস্থ সর্বহারাদের ব‍্যথায় শিক্ষিকার কাজে ইস্তিফা দিয়ে সারা জীবন শুধু এই জীবনদেবতার পূজা করে গেলেন, যাকে মাদার বলেছেন, ‘Call within a call’, অর্থাৎ জীবনদেবতার ডাকে সাড়া দেওয়া এবং আত্মাঞ্জলি দেওয়া তাঁর পায়ে।

মাদার বার বার শিখিয়েছেন মানবতাবাদের মূল মন্ত্র, করুণা-ভালোবাসা। ‘We cannot do great things. We can only do little things with great love.’ কেমন সুন্দর উপলব্ধি।

একবার এক রুটিওয়ালার কাছে কিছু ক্ষুধার্ত শিশুর জন‍্য রুটি চাইতে গেলে দোকানী সাদা শাড়ি মাথায় পেঁচানো বিদেশী মূর্তির দিকে দিলে থুতু ছিটিয়ে। মাদার শাড়ির আঁচলে থুতু মুছে তেমনি স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে বিনম্র সুরে বললেন, ‘এই থুতুটুকু আমার। এবার আমার সন্তানদের জন‍্য রুটিটুকু দাও!’ কতটা আত্মসমর্পণ ও অহমিকাশূন‍্য হলে এমন ভাবে কথা বলা যায়! ধর্ম নিয়ে ছেলেধরা খেলায় মত্ত থাকে যারা তাদের কি এমন অনুভূতি আসতে পারে?

মাদার লিখেছেন, ‘একবার রাত্রে শহরে ঘুরে চার পাঁচ জন মরোমরো মানুষকে নিয়ে এলাম আশ্রমে। তারই মধ‍্যে একটি মেয়ের অবস্থা ছিল খুবই সঙ্গীঁন। আমি ব‍্যক্তিগত ভাবে তাকে যত্ন করে পরিষ্কার করলাম। শয‍্যায় যখন শোওয়াচ্ছি তার মুখমণ্ডলে সে কি স্বর্গীয় হাসি। আমার হাত দুটো শীর্ণ মুঠিতে ধরলে এবং “মা” বলে ডেকে মৃত‍্যুর কোলে ঢলে পড়লে।’

‘আমি স্তব্ধ হয়ে বসে বসে ভাবলাম ওর জায়গায় আজ তো আমিও হতে পারতাম। হয়তো বহির্বিশ্বের উদাসীনতা সহ‍্য করতে না পেরে আমি চীৎকার করতাম — “ওগো আমার পেটজোড়া খিদে! ছাতিভরা তেষ্টা! আমি ঠাণ্ডায় জড়সড়! ওই তো মৃত‍্যু, আমাকে বাঁচাও!” অথচ ওই মহীয়সী একটি কথা না বলে শুধু মুখের হাসিতে প্রাণের ভালোবাসাটুকু জানিয়ে গেল।’

মাদারের আশ্রমে হিন্দুদের জীবনদীপ নিবেছে গঙ্গঁাজলের শান্তিবারি মুখে নিয়ে। মুসলমানরা কোরানপাঠের পবিত্রতার সুরে শেষ নিঃশ্বাস ফেলেছে। খ্রীষ্টদের জন‍্য পবিত্র বাইবেলের ‘লাস্ট রাইট্স্’। মৃত‍্যুকে মাদার মহীয়সী করে দিয়েছিলেন এই আর্তদের জীবনে। ফুটপাথে ছুঁচো ইঁদুর কীট পতঙ্গেঁ খুবলে খাওয়া মৃত‍্যু নয়, দিয়েছিলেন সম্মানের মৃত‍্যু।

মানুষের জীবনে ধর্ম মানে কি? যা আমাদের ধারণ করে তাই ধর্ম। আমাদের অস্তিত্ব, সত্তা ধারণ হয় ধর্মে। প্রেম, ভালোবাসা, ত‍্যাগ-তিতিক্ষা, সৎ চিন্তা এবং সৎ কর্ম। এই হল ধর্মের মূল চরিত্র। হিন্দু জীবনদর্শনে ধর্মের স্থান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের সকল শুভ মূল‍্যবোধের স্রোতধারা ধর্মের সঞ্জীবনী সুধারসে পুষ্ট হয়।

আবার এই ধর্ম কিন্তু অধরা। মন্দির, মসজিদ, চার্চে ধর্ম থাকে না। ধর্ম থাকে না গীতায়, কোরানে, বাইবেলে। ধর্ম থাকে চেতনায়। চেতনার সঠিক বোধে ধর্মকে রাখলে ধর্ম ধারণ করে সকল শুভ, মঙ্গঁল, কল‍্যাণ। আর চেতনার পঙ্কে ধর্মকে রাখলে সে হয় নিঠুর, খল, ক্রুর, ধান্ধাবাজ। তখন ধ্বংসই হয় ধর্ম।

মাদার কোনোদিন এই সর্বহারাদের ধর্মচু‍্যত হতে দেননি। কারণ তিনি যে এই সমাজের চোখে ঘৃণিত অনাদৃত অবহেলিত নরকের কীটসম মানুষগুলোকে ছদ্মবেশী ‘যীশু’ দেখেছিলেন। তাই বড় যত্নে এদের দেহের ক্ষত মুছেছেন, নিরাময়ের ওষুধ দিয়েছেন, পেটে অন্ন, পরণে বস্ত্র দিয়েই ক্ষান্ত হননি। এই মানুষগুলো যে প্রাপ্তির অভাবে প্রতিনিয়ত তাড়িত লাঞ্ছিত সেই পরম প্রাপ্তি — এক আকাশ পুকুর ভালোবাসা — দিয়েছেন উপছে ভরে।

এদের জন‍্য বাসস্থান খোঁজার জন‍্য কোলকাতায় কত পথ হেঁটেছেন মাদার। ক্লান্ত মনে ডায়েরীতে লিখেছেন — ‘While looking for a home I walked and walked till my arms and legs ached. I thought how much they must ache in body and soul looking for a home, food and health.’ ধর্মের তথাকথিত ধ্বজাধারীরা কি ভাবেন এমন করে সব হারানো মানুষের কথা?

স্বামী বিবেকানন্দ দিয়েছেন জীবকে শিব জ্ঞানে সেবা করার শিক্ষা। আর প্রকৃত সেবা হবে অহংকারশূন‍্য। মাদার জন্মাবধি ধর্মপ্রাণ ক‍্যাথোলিক। তা তিনি যদি জীবকে শিব না দেখে যীশু দেখেন, তাহলেই গেল গেল রব উঠবে?

গরীবদের জীবনে শিব বা কি, যীশুই বা কি! কোনো হিন্দুধর্মের স্বামীরা কুকুরের সাথে উচ্ছিষ্ট খুঁটে খাওয়া ‘শিব’কে আদর করে বুকে জড়িয়ে ধরবে? কোনো সরকার তাদের পঙ্গুঁ রোগগ্রস্ত জীবনের দায়িত্ব নেবে? সমাজের মানুষের অভিশাপ কুড়িয়ে যাদের বেঁচে থাকা, মৃত‍্যুকামনা যাদের রোজকার প্রার্থনা, তাদের কাছে ধর্ম মানে কালী কৃষ্ণ শিব নয়। তারা চায় স্বীকৃতি, ভালোবাসা আর স্বস্তির ধারণ পেতে।

ভারতের ধর্ম উদারতা, সহিষ্ণুতা এবং ত‍্যাগ। অথচ সেই ধর্মাচরণে কেউ আগ্রহী নয়। ‘হিন্দুত্ব’ই আজ সবর্েসর্বা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ‘হিন্দুত্ব’ শব্দটা কি দিতে পারে মানুষকে, তা কি ভেবে দেখেছি আমরা একবারও?

Facebook Comments


এই রকম নতুন গল্পের খবর ই-মেলে পেতে সাইন-আপ করুন এখনই!

Leave a Comment: