চৈত্র সেল

Download this post in PDF format if your browser doesn’t display Bangla script properly.

ক্লান্তির ফাঁকে এক কাপ গরম চা, মর্ণিং ওয়াকে বেরিয়েই গায়ে মুখে এসে লাগা ঠাণ্ডা মিষ্টি হাওয়ার ঝাপটা, বাগানের কাল পর্য‍্যন্ত দেখা কুড়িটা ফুল হয়ে ফোটা, টাইম মতো কাজের বৌটার দরজার বেল বাজানো অথবা চৈত্র সেলে কেনা ‘হরেক মাল’-গুলো একেবারে বাপের খেদানো মায়ের তাড়ানোর মতো নয়, সেটা আবিষ্কার করা!

এই সব আপাত নিরীহ নিতান্ত গতানুতিক ঘটনাগুলোর থেকে সুখ, তৃপ্তি, খুশী খুঁজে পেলেই কেল্লা ফতে। জীবনের আনন্দ, সুখ, তৃপ্তি — এই তিন ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বরকে পাওয়ার জন‍্য বিরাট কোনো অশ্বমেধ যজ্ঞের আয়োজন করার দরকার হয় না। খামোখা কাকভোরে উঠে দামড়া কেড্স্ জুতো পায়ে গলিয়ে ভেতো মুখ আর তেতো মনে লাফিং ক্লাবে গিয়ে হা-হা-হা-হা করে রাবণহাসি হেসে বুকের খাঁচা না সরালেও চলবে!

চৈত্র সেলের কথায় মনে পড়ল, এখন মধুমাস! আমার বোন বিকেলের বরাদ্দ ফুচকা ফাল্গুনী বাতাসের সঙ্গেঁ উদরস্থ করে গদগদ হয়ে আমাকে এক লাইন লিখলে — ‘বসন্ত এসে গেছে।’

পড়ে অবাক হলুম। লিখলুম — ‘তো? নিজের বাড়িতে বসন্ত আসবে না তো কি চোর আসবে?’

প্রচণ্ড রাগ দেখিয়ে সে পাল্টা লিখলে — ‘ওরে আহাম্মক! এ বসন্ত আমার বর বসন্ত নয়!’

ও হরি, তাই বলো — এ মধু বসন্ত!

মনটা কিছু খারাপের দিকে ঢললো। বসন্তের তো আমাদের এখানেও আসার কথা। অথচ ফুলের বাজারে আর পথঘাটের কোণে কিনারে একমুঠো হলদে ড‍্যাফোডিলের গালভরা হাসি ছাড়া আর তো তেমন কিছু বুঝছি না।

সপ্তাহ ফুরোল না, দেখি বোন আবার লিখেছে, ‘দূর হয়ে যাক্ যাক্ যাক্।’ পড়ে আক্কেল গুড়ুম হয়ে গেলো। ‘কাকে দূর দূর করছিস?’ জানতে চেয়ে লিখলাম।

উত্তর এলো — ‘বর্বর বসন্তকে।’ মানে! এই তো আহ্লাদ হচ্ছিল মধুমাসের সর্বনাশে পড়ে। হঠাৎ হল কি?

বোনকে না ঘাঁটিয়ে ধরলাম শাঁটুলকে। ‘হ‍্যাঁ রে, তোদের খবর কি?”

‘ম‍্যারিনেটেড স্টেজে আছি, মামী!’
‘সে আবার কি রে?’
‘ঘামের জলে।’
‘কিন্তু এখন তো বসন্ত!’
‘তোমার বসন্ত গেছে তেল আনতে। এবার ভাজাপর্ব শুরু হবে। গুরুদেব গরমের যেমন মর্জি। বেক্ড্, গ্রীলড, ভাপা, পোড়া। তোমার আর কি! থাকো তো গায়ে বোঁটকা গন্ধওয়ালা ইগলুওয়ালাদের পড়শি হয়ে। যতো বড়শি তো গিলছি আমরা!’

প্রসঙ্গঁ ঘোরাতে বলি, ‘শাঁটুল! চৈত্র সেল চলছে না কি এখনো?
‘রম রম করে।’
দেখিস তো, দিদার যদি কিছু লাগে।’
‘হাঃ হাঃ। লাগবে বৈ কি! দিদা অলরেডি লিস্টি ধরিয়ে দিয়েছে হাতে। শুনবে?’

মনে মনে ভাবি, বাব্বাঃ, এই বয়েসেও মা চৈত্র সেলের মোহমায়া ছাড়তে পারলো না! উদাস সুরে বলি, ‘বল।’
‘একটা হাতকড়া, কোমরে বাঁধবার নারকেলে দড়ি, পেট গুঁতোবার লম্বা রুল আর মুখ দেখানোর লজ্জা ঢাকতে মাথা চাপা দেওয়া ছালার একটা বস্তা।’

বুড়ো মার মস্তিষ্কের সুস্থতার চিন্তায় মিনিট দুয়েক কথা আটকে যায়। শেষে সামলে নিয়ে বলি, ‘এসব কি শাঁটুল!’

শাঁটুল তরল গলায় বলে — ‘দিদা বলেছে, “ছ‍্যামড়া বসন্তডারে ধরতিই পাইলাম না দ‍্যাখলি? অরে ছালার বস্তায় ঢাইক‍্যা চৈত্র সেলে পুইর‍্যা পুলিশি মার মাইর‍্যা দ‍্যাশ ছাড়া করা উচিত আমাগোর। দামড়া, আইলাই বা ক‍্যান? গ‍্যালাই বা ক‍্যান?”’

জনান্তিকে খবর, জামাই বসন্ত শাশুড়ির চৈত্র সেলের বাজার ফর্দ শুনে বেজায় টেনশনে আছে।

শাঁটুলকে বৃতান্ত জিজ্ঞেস করেছিলাম ঘটনার পরিণতি জানতে। আত্মপক্ষ সমর্থন করে সবে বলেছি, ‘এখানে তো আমরা গরমই পাই না, তো বসন্ত! আমাদের দুঃখুটা কি তোরা বুঝবি?’

সে চালিয়াতি সুরে বললে, ‘মামী, খাপ খুলো না। ঠাণ্ডা-ঠাণ্ডায় ঘাপটি মেরে আছো, থাকো। ঠাণ্ডার রং দেখিও না। পাবলিক কেলাবে, এই বলে দিলুম!’

Facebook Comments


এই রকম নতুন গল্পের খবর ই-মেলে পেতে সাইন-আপ করুন এখনই!

Leave a Comment:

3 comments
Add Your Reply